ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ বিজয় - জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ১০:৩২, বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ বিজয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪ ২:৩৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪ ২:৩৯ অপরাহ্ণ

 

ডা. ওয়াজেদ খান

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ করেছে বাংলাদেশ। জাতীয় জীবনে সৃষ্ট গভীর সংকট ও নবতর প্রত্যাশার সন্ধিক্ষণে রাষ্ট্রের দায়িত্বভার বর্তেছে তার উপর। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো তিনি এসেছেন বিদেশ সফরে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন তিনি। এই বিশ্বনেতা বাংলাদেশের ৫৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে প্রকাশ করা হয় ৭ জন সফর সঙ্গীর একটি তালিকা। পরবর্তীতে জাতিসংঘে তার কর্মসূচির কলেবর বৃদ্ধি পেলে একদিন এগিয়ে আনা হয় নির্ধারিত সফরের তারিখ। বাড়ানো হয় কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সংখ্যা। জানা গেছে, প্রতিনিধি দলের মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা ও প্রটোকলে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ।

ড. ইউনূস নিউইয়র্ক এসে পৌঁছানোর পরদিন সকাল থেকেই একের পর এক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বৈঠকে বিরামহীনভাবে যোগদান করছেন। প্রথম দিনেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বৈঠক করেছেন। দুই নেতার মাঝে প্রায় আধা ঘণ্টার এই বৈঠক ছিলো ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিতর্ক শুরুর প্রথম দিন প্রথা অনুযায়ী স্বাগত ভাষণ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি সর্বোচ্চ দু’দিন অবস্থান করেন নিউইয়র্কে। তার ভাষণের পরপর হাঁটা পথে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের সাথে অনির্ধারিত দেখা হয়। সেলফিও তোলেন অনেকে। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত ছাড়া আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকে মিলিত হন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ড. ইউনূসের সঙ্গে জো বাইডেনের যে আলোচনা হয়েছে, বিগত তিন দশকের মধ্যে এটি নজিরবিহীন এক ঘটনা। সাধারণত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্য দেশের সরকার প্রধানের সাক্ষাৎ ঘটে লবিতে। সেখানে তিনি কারো সাথে কোনো বৈঠকে মিলিত হন না। সেজন্য জাতিসংঘ সদর দফতরে বাইডেন-ইউনূস বৈঠক ছিল ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই বৈঠকে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন জো বাইডেন। ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের। সবচেয়ে বড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বৈঠকটির অন্তরঙ্গতা। ছবি কথা বলে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে এবার। জো বাইডেন ড. ইউনূসকে জড়িয়ে ধরে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বিরল আন্তরিকতার। এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে এই সফরের সার্থকতা।

এ বৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউজ প্রকাশ করেছে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নিঃসন্দেহে সৃষ্টি হবে নতুন দিগন্ত। জো বাইডেন ছাড়াও একই দিন ড. ইউনূসের সাথে আলোচনা হয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালীর প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস, আইএম এফ প্রধান ক্রিস্টিলিনা জর্জিভা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভসহ বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দের সাথে।

প্রতিটি বৈঠকেই ড. ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের নিকট নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেছেন। বিজয় গাঁথা তুলে ধরেছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের। বিশ্ব দরবারে দাঁড়িয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়েছেন গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের বেদনার কথা স্মরণ করে। জাতিসংঘের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তিনি বাংলাদেশ ও তার মানুষের কথা অকপটে তুলে ধরেন। পরিচয় করিয়েছেন তার সফরসঙ্গী গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়ক শিক্ষার্থীদেরকে।

গ্রামীণ পোশাক পরা ড. ইউনূস একজন অতি সাধারণ মানুষ মনে হলেও তার নেতৃত্ব তাকে দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও দেশাত্মবোধ অসাধারণ করে তুলেছে। সাধারণ পরিষদে তার সফর কালে বাহ্যিক কোনো চাকচিক্য নেই। কিন্তু আছে বিশাল অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা ও প্রাপ্তি। তার সফরের দ্বিতীয় দিনেও ছিলো এক ডজন কর্মসূচি। বাকি দিনগুলো আরো গুরুত্ব বহন করবে বাংলাদেশের জন্য এব্যাপারে সবাই অত্যন্ত আশাবাদী।

ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গত ১৫ বছরে ১৪ বার এবং এর আগে ‘৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে মোট তিনবারসহ মোট ১৭ বার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশ নেন শেখ হাসিনা। প্রতিটি সফরেই তিনি পরিবার, দল ও প্রশাসনের দু’শতাধিক ব্যক্তিকে করেছেন সঙ্গী। দু’সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রে তিনি আমোদে সময় কাটিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অর্থের শ্রাদ্ধ করে কুড়িয়েছেন অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি ও নানাবিধ পুরস্কার। জাতিসংঘে হাসিনার যোগদানের প্রতিটি সফরই ছিলো বিলাসী। ফি-বছর সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে হাসিনার নিউইয়র্ক আগমনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী হাট বসতো তার হোটেল লবিতে। অর্থ পাচার ও লুটপাটের দেন দরবার চলতো সেখানে। দলীয় সংবর্ধনা নিলেও সাধারণ প্রবাসীদের সাথে কোনো যোগাযোগ ছিলো না হাসিনার। এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানেই ব্যতিক্রম ফ্যাসিবাদী শাসকের সাথে।

সময়ের স্বল্পতার কারণে এবার প্রবাসীদের সাথে মিলিত হতে পারছেন না ড. ইউনূস। শুনশান নীরবতা ম্যানহাটানের গ্র্যান্ড-হায়াত হোটেলের লবি। নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন ড. ইউনূস ও তার সফর সঙ্গীরা। এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন নানা কারণেই বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ড. ইউনূসের নির্মোহ নেতৃত্ব দেশকে ইতোমধ্যেই পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ব দরবারে নতুন এক উচ্চতায়। আমরা আশাবাদী ড. ইউনূসের দূরদর্শিতা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে। বিদ্যমান সকল বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র কাটিয়ে বাংলাদেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাবেন তিনি। চুরাশি বছর বয়সে তার উদ্যোম, কর্মস্পৃহা ও বিরামহীন এগিয়ে চলা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে নতুন প্রজন্মের জন্য। ক্যারিশম্যাটিক এই নেতার সম্মোহনী বক্তৃতা শ্রোতাদেরকে করে মন্ত্রমুগ্ধ। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য আজ দুনিয়াজুড়ে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক ও অদ্বিতীয়। একজন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ বিজয়ে আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন।

লেখক:
সম্পাদক
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com