ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়; আহলান সাহলান মাহে রবিউল আউয়াল
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪ ১০:০১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪ ১০:০১ অপরাহ্ণ
মকিস মনসুর,
“জাজিরাতুল আরব যখন আইয়ামে জাহেলিয়াত বা পাপাচারের অন্ধকারে ডুবে ছিল,আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা।তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটি সহ নানান অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এমনকি মূর্তিপূজা করত। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে তখন মহাণ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নূরে খোদা, আমাদের মহানবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আলোকবর্তিকা হিসেবে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন।
গত ১৩ ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পূর্বের বয়ানে বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহরের শাহজালাল মসজিদের ঈমাম ও খতীব মাওলানা কাজি ফয়জুর রহমান ও রিভারসাইড জালালিয়া মসজিদের ঈমাম ও খতীব মাওলানা আব্দুল মোক্তাদির সহ বিভিন্ন মসজিদের ঈমামগন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) এর তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করা সহ এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদ্যাপন করার আহবান জানিয়েছেন।
“যিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে সর্বোত্তম সৃষ্টি, যিনি মহত্তম আদর্শের অধিকারী, যিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠতম পথিকৃৎ, যিনি স্রষ্টা ও পালনকর্তা মহাণ আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের প্রিয়তম রাসুল, পিয়ারা হাবিব, বিশ্ব সভ্যতায় যাঁর অবদান সর্বাধিক, যিনি সমগ্র বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য প্রেরিত, যাঁর আগমনের অপেক্ষা করেছেন যুগ যুগ ধরে,
লক্ষাধিক আম্বিয়ায়ে কিরামগন। যিনি সাইয়িদুল মুরসালিন, খাতিমুন নাবিয়্যিন,যাঁর দিদার (সাক্ষাৎ) এর জন্য ব্যাকুল ছিলেন বিশ্বকূল।
মহান আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের অপার রহমতে
আমাদের বিশ্বনবী প্রায় এক হাজার ৪০০ বছর আগে তথা ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার মক্কা নগরীর মরু প্রান্তরে বিশ্ব মুসলমানদের সবচেয়ে বড় পবিত্রস্থান মসজিদুল হারাম থেকে সামান্য দূরেই রাসুল (সা:) এর পিতা আবদুল্লাহর ঘরে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ গোত্রে সুবহে সাদিকের সময় মা- আমেনার কোল আলোকিত করে শুভ আবির্ভাব তথা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। “ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়…।’
এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়ালের একই দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান, তাই এই দিনটিকে তথা মানব জাতির শিরোমণি মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা:)এর জন্ম ও ওফাতের স্মৃতিময় ও পুণ্যময় দিন হিসেবে বিবেচনা করেন মুসলিম জাহান।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, যেহেতু নবী করীম (সা:) ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেন, সেহেতু এই দিনটি ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। বিশেষত দু’টি কারণে ১২ রবিউল আউয়াল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। প্রথমত, সব ইতিহাসবিদের ঐকমত্য বর্ণনা মতে, এই দিনেই মহানবী (সা:) পৃথিবীবাসীকে কাঁদিয়ে ওফাত লাভ করেন। দ্বিতীয়ত, প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী, এই ১২ রবিউল আউয়াল তারিখেই মহানবী (সা:) জন্মগ্রহণ করেন। [সিরাতে ইবনে হিসাম (খ- ১) পৃষ্ঠা- ১৫৮]
মহানবী হযরত মুহম্মাদ (সা:) এর জন্মদিন হিসেবে তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলে ও সোমবার দিন সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। কারণ, জীবন চরিতকাররা সবাই একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন নবী মুহম্মাদ (সা:)-এর জন্ম হয়েছিল। এই সোমবার ৮ অথবা ৯ কিংবা ১২ তারিখ এটুকুতেই হিসাবের পার্থক্য রয়েছে মাত্র। আমাদের উপমহাদেশে সুদীর্ঘকাল হতেই ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী (সা:)-এর জন্মদিন হিসেবে পালন হয়ে আসছে। তবে ১২ রবিউল আউয়াল যে মহানবী (সা:)-এর ওফাত দিবস তাতে সব ঐতিহাসিকই ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
(সূত্র: ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
“সত্যবাদিতা ও সততার প্রতীক, শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত, করুণা, ক্ষমাশীলতা, বিনয়, দানশীলতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের আগমনের ১২ রবিউল আউয়াল এর এই দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) (আরবি: مَوْلِدُ النَبِيِّ মাওলিদু এন-নাবীয়ী, আরবি: مولد النبي মাওলিদ আন-নাবী, কখনো কখনো সহজভাবে বলা হয় مولد মাওলিদ, মেভলিদ, মেভলিট, মুলুদ আরো অসংখ্য উচ্চারণ; কখনো কখনো: ميلاد মিলাদ) হচ্ছে শেষ নবীর জন্মদিন হিসেবে মুসলমানদের মাঝে পালিত একটি উৎসব।
প্রতিটি ঈদ আমাদের সবার জীবনে বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ। আরবি শব্দ ‘ঈদ’ এর আভিধানিক অর্থ খুশি হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উদযাপন করা ইত্যাদি। আর ‘মিলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মতারিখ, জন্মদিন, জন্মকাল ইত্যাদি। “সকল ঈদের ঈদ, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে
জগতের প্রতিটি মুমিন-মুসলমানের সমস্ত আবেগ-অনুরাগ প্রাণোত্সারিত ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসে একাকার হওয়া প্রাণ-মন-মনন আকুল করা দিন তথা নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়।
বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, বাহরাইন, বেনিন, ব্রুনাই, বুরকিনা ফাসো, চাদ, মিশর, গাম্বিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জর্দান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজার, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, সেনেগাল, সোমালিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া এবং ইয়েমেন সহ বিশ্বময় বিভিন্ন দেশে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে উৎযাপিত হয়। এবছর ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে যথাযথ মর্যাদায় মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশ সহ বিশ্বময় বসবাসকারী মুসলমানরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:)পালন করার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এই দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশেষ পুণ্যলাভের আশায় মিলাদ-মাহফিল, নফল নামাজ আদায়, জিকির ও কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকবেন।
“পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে মহাণ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’।
আমাদের প্রিয় বিশ্বনবীর জন্মকে কেন্দ্র করে অনেক আশ্চর্যজনক কাজের জন্ম হয়েছে, যা সব জাতিকে বিমোহিত করেছে এবং তৎকালীন সময়ে গোটা বিশ্বে তা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল; সৃষ্টি হয়েছিল বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনাও। তাঁর পবিত্র জন্মের পর তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত পবিত্র কা’বা শরীফ দুলতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে কুরাইশ গোত্রের লোকেরা তথা গোটা আরব জাহানের মানুষেরা রাসূলুল্লাহ্ (সা:)’র জন্ম সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারে (সিরাতে হালবিয়া, নবী (সা.)’র আবির্ভাব অধ্যায়)। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যার স্মরণ সব জাতি সব যুগে করেছে। তিনি সেই মহামানব, যার নাম পবিত্র ইঞ্জিল ও তাওরাত শরীফে উল্লেখ আছে। সেখানে তাকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘আহমদ’ নামে আর কুরআনে পাকে ‘মুহম্মাদ’ নামে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খ– ২, পৃষ্ঠা ৩২৪)
মহানবী (সা:) যে রাতে জন্মগ্রহণ করেন, সেই রাতে পারস্যের রাজ প্রাসাদে প্রবল ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়, যার ফলে তৎক্ষণাৎ সেই প্রাসাদের ১৪টি গম্বুজ ভেঙে পড়ে। এই নিদর্শনের মাধ্যমে তাদের ১৪ জন বংশধর ক্ষমতাবান হওয়ার ইঙ্গিত প্রদান করা হয়।
আর এই ১৪ জনের মধ্যে পরবর্তীতে মাত্র ৪ বছরে ১০ জন শাসক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। আর বাকী শাসকরা ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত উমর (রা:)’র শহীদ হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। মহানবী (সা:)’র জন্মের দিন পারস্য তথা ইরানের আগুন নিভে যায়, যা হাজার বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত ছিল। [বায়হাকি, দালাইলুন নবুয়্যাহ্ (প্রথম খ-) পৃ. ১২৬]
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা:) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহর আমার প্রতি সম্মান হলো, আমি খাত্নাবিশিষ্ট অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি, যাতে আমার লজ্জাস্থান কেউ না দেখে। (মু’জামে আওসাত, হাদীস নং- ৬১৪৮)
হজরত ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা:) বলেছেন, তখন থেকে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবীকুলের সর্বশেষ নবী, যখন আদম (আ.) মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন। আমি তোমাদের আরো জানাচ্ছি, আমি হাবিব আমার পিতা নবী হজরত ইবরাহিম (আ:)-এর দোয়ার ফসল এবং নবী হজরত ইসা (আ:)-এর সুসংবাদ, আর আমার মাতা (আমিনার) স্বপ্ন।
নবীদের মাতারা এভাবেই স্বপ্ন দেখতেন। রাসুল (সা:)-এর মা তাঁকে প্রসবের সময় এমন এক নূর প্রকাশ পেতে দেখলেন যার আলোয় সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখা যাচ্ছিল (তাবারানি, হাদিস নম্বর : ১৫০৩৩)।
রাসুল (সা:)-এর আগমনের উৎসব আল-কোরআন দ্বারা স্বীকৃত। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার দয়াপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দ প্রকাশ কর। এটি উত্তম সেই সমুদয় থেকে, যা তারা সঞ্চয় করেছে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত ৫৮)
রাসুল (সা:) প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী (সা:) পালন করতেন। হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা:)-এর কাছে সোমবার দিন রোজা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসলিম : ১১৬০)।
মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহুর প্রেম অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজা নামের এক ধর্ণাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করেন।
ফেরেশতাদের দলপতি জিবরাইল (আ:), যাঁর দরবারে
জিবরাইলকে ২৩ বছরে ২৪ হাজার বার হাজির হতে হয়েছে, যিনি আল্লাহর দিদার লাভ করেছেন শবে মিরাজে,
যিনি সর্বপ্রথম মহাশূন্য পরিভ্রমণ করেছেন, সারা বিশ্বে আজ শতকোটি মানুষ যাঁর অনুসারী, যাঁর আদর্শ মহান, অতুলনীয়, অদ্বিতীয়, চিরস্মরণীয়, চিরঅনুকরণীয়, চির সংরক্ষিত, চির-প্রশংসিত, তিনিই তো সেই অনন্যসাধারণ ফুল, যাঁর সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবি আনাস (রা:) বর্ণনা করেন : আমি কোনো কস্তুরি, কোনো আম্বর এবং কোনো সুগন্ধি বস্তু রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে অধিকতর খুশবুদার পাইনি। যদি কারো সঙ্গে প্রিয় নবী (সা:) মুসাফাহা (করমর্দন) করতেন, তবে সমস্ত দিন ওই ব্যক্তির হাতে নবী (সা:)-এর মুসাফাহার খুশবু লেগেই থাকত। আর যদি কখনো কোনো শিশুর মাথায় তিনি হাত বুলিয়ে দিতেন, তাহলে খুশবুর কারণে ওই শিশু হাজারো শিশুর মধ্যে অত্যন্ত সহজে পরিচিত হতো। প্রিয় নবী (সা:) একবার আনাস (রা:)-এর ঘরে বিশ্রাম করছিলেন।
নবী (সা:)-এর দেহ মোবারক ঘর্মাক্ত হয়ে উঠল। আনাসের মা নবীজি (সা:)-এর দেহ মোবারকের ঘাম একটি শিশিতে পুরে নিচ্ছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কী করছ? তিনি উত্তর দিলেন : হে আল্লাহুর রাসুল! আমরা এগুলোকে আমাদের খুশবুর সঙ্গে মিশ্রিত করব। কেননা আপনার এই ঘাম সর্বোত্তম সুগন্ধি।
ইমাম বুখারি (রহ.) জাবির (রা:)-এর সূত্রে ‘তারিখে কবির’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন : নবীজি (সা:) যদি কোনো দলের সঙ্গে কোথাও গমন করতেন, যদি কেউ তাঁর অনুসন্ধান করত, তাহলে সে শুধু খুশবুর কারণেই তাঁর সন্ধান লাভ করত। তাই তিনিই সেই অপূর্ব বিস্ময়কর ফুল ‘যে ফুলের খুশবুতে সারাজাহান মাতোয়ারা’।
মানবজাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামিনের তাওহীদের বাণী।
অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আধারের বুক চিড়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তি নিয়ে এসে মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন।
“বিদায় হজ্বের ভাষণে মহানবী আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে :
‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দিন তথা জীবনব্যবস্থা পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দিন তথা জীবনব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’
হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পণ্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইত। তার আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে।
দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের পর মানবজাতির জন্য রেখে গেলেন আসমানী মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন। যার মধ্যে রয়েছে মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির পথ নির্দেশিকা। মাত্র ৬৩ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও এখনো তার আদর্শে অনুপ্রাণিত পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তর।
শুধু আমার ও আমাদের নয় সমগ্র মুসলিম উম্মার
দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’
‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর জন্ম ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত ১২ই রবিউল আউয়াল তথা ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) বিশ্ববাসী বিশেষত মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিনে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানানো সহ আসুন মহানবী (সা:)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে কাজ করা সহ ইসলামের সঠিক আকিদা অনুযায়ী আমাদের জীবন পরিচালিত করি, আমিন,,সুম্মা আমিন,,
মোহাম্মদ মকিস মনসুর,
লেখক ও সাংবাদিক,
সাবেক সেক্রেটারি,
কাডিফ শাহজালাল মস্ক এন্ড ইসলামিক কালচারাল সেন্টার ইউকে,
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,
আনজুমানে আল- ইসলাহ ইউকে ওয়েলস ডিভিশন,
চেয়ারম্যান,ইউকে বিডি টিভি,ওয়েলস বাংলা নিউজ,