পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ - জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ৬:৪১, সোমবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫ ৭:৪৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫ ৭:৪৬ অপরাহ্ণ

 

নিজস্ব প্রতিনিধি

এতে কোটি প্রবাসী লাভবান হবেন। এ দাবী পূরণ সব প্রবাসীদের অর্জন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. আসিফ নজরুলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। আজ লন্ডনে অনুষ্টিত জনাকীর্ন সংবাদ সম্মেলনে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বৃটিশ সুপ্রীম কোর্টের প্রতিথযশা আইনজীবী ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার টানা তিনবারের সাবেক ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, দাবী আদায়ে সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে কড়া নাড়তে হয়। আর্টিকোলেট ওয়েতে দাবি তুলে ধরতে হয়। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং স্মার্টলি সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি তাহলে আমরা আমাদের সব দাবী এক এক করে পূরণ করতে পারবো ইনশাহআল্লাহ। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত আমাদের দাবী পূরণ আমাদের প্রবাসীদের সম্মিলিত অর্জন। এ বিজয় ও আনন্দ আমাদের সবার। এতে দেড় কোটি প্রবাসী লাভবান হবেন। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা অধ‍্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও তাঁর টীমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিশাল প্রবাসীদের স্বার্থে এই দাবী বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত জটিলতার পটভূমি তুলে ধরে ব‍্যারিস্টার নাজির বলেন, পতিত সরকার হঠাৎ ৩ বছর আগে আজগুবি নিয়ম চালু করেন যে পাওয়ার অব এটর্নী সম্পাদন করতে হলে ভেলিড বাংলাদেশী পাসপোর্ট লাগবে। পাওয়ার এটর্নী সম্পাদনে ভেলিড বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক নিয়ম কেন যে করা হয়েছিল তার যুক্তিসংগত কারণ ও ব্যাখ্যা কখনও পাওয়া যায়নি। পাওয়ার অব এটর্নীর সাথে ভেলিড বাংলাদেশী পাসপোর্ট বা বাংলাদেশী নাগরিকত্বের কি সম্পর্ক? পাওয়ার অব এটর্নী কি ট্রেভেল ডকুমেন্ট যে পাসপোর্টের ভেলিডিটি লাগবে? পাওয়ার অব এটর্নী সম্পাদন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা হাইকমিশন বা দূতাবাস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে বিভিন্ন ধরণের স্বীকৃত আইডি দেখতে পারে। সেই আইডির অংশ হিসেবে পাসপোর্ট বা বিকল্প আইডি যথেষ্ট ছিল। ভেলিড বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক নিয়মটি চালু করা হয়েছিল তিন বছর বছর আগে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে পঞ্চাশ বছর এই নিয়ম ছিল না। তখন তো প্রবাসীরা পাওয়ার অব এটর্নী দিয়েছেন এবং তাতে তো কোন সমস্যা হয়নি। পাওয়ার অব এটর্নী সম্পাদনে অভিনব নিয়মের ফলে চরম ভূগান্তিতে পড়েছিলেন লক্ষ লক্ষ প্রবাসী।

তিনি বলেন, আইনি পেশায় জড়িত থাকায় এই সমস্যার কথা প্রথমদিকেই আমার কাছে পৌঁছে। এই সমস‍্যার ব‍্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ‍্যে বৃটেনের কয়েকটি বাংলা টিভি চ্যানেলে সনির্বন্ধ অনুরোধ করে লীড নিউজ করানোর ব‍্যবস্থা করি। ফলে কমিউনিটিতে ব‍্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় এবং প্রবাসীরা এ ব‍্যাপারে অবহিত হন। এরপর বেশ কয়েকটি টকশো অনুষ্ঠিত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেই। কয়েকটি টকশোতে আমি নিজে আলোচক হিসেবে যোগ দিয়ে আইনি ও যুক্তিসঙ্গত পয়ন্টগুলো তুলে ধরি। অনলাইন মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশ করার ব‍্যবস্থা করি সাক্ষাৎকার দিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি পোস্ট ও স্টেটাস দেই। প্রায় ডজনখানেক মিটিং ও সেমিনারে এ নিয়ে বক্তব্য দেই। প্রায় সমান সংখ্যক টিভি টকশোতে কথা বলি। কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ যার যার অবস্থান থেকে পাওয়ার অব এটর্নী প্রদান সংক্রান্ত জটিলতার ব‍্যাপারে সোচ্চার হন। তারা বিভিন্ন ফোরামে জোরালো বক্তব্য রাখেন ও ক‍্যাম্পেইন করেন। বাংলাদেশ থেকে কর্তা ব‍্যক্তিরা আসলে দাবী দাওয়া পেশ করেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রভাবশালী একটি জাতীয় দৈনিকে এই সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত কলাম লিখি। তারপর গত বছর এপ্রিলে দেশে গেলে এ নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করি। বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক গুরুত্বসহকারে প্রেস কনফারেন্সটি কাভার করে। বিবিসি বাংলা বিভাগ সিলেটের প্রেসক্লাব সেক্রেটারির মাধ‍্যমে আমার নাম্বার সংগ্রহ করে টেলিফোনে সাক্ষাৎকার নেয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আমি ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানসহ আমরা কয়েকজন প্রফেশনাল লন্ডনে বেশ কয়েকটি সেমিনার ও রাউন্ড টেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করি। এগুলোতে আমরা প্রবাসীদের জন‍্য সুনির্দিষ্ট ছয় দফা দাবি উত্থাপন করি। এরমধ্যে অন‍্যতম প্রধান ছিল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত জটিলতার অবসান। গত বছর আগস্টে আমরা একই সময়ে ঢাকায় ছিলাম। এবারও এক সাথে ঢাকায় ছিলাম। প্রতিবারই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবিগুলো আমরা জোরালোভাবে তুলে ধরি যা জাতীয় পত্রিকাগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে। কোনকিছুতেই কাজ হচ্ছিল না।

জটিলতা নিরসনের পেক্ষাপট বর্ননা করতে গিয়ে ব‍্যারিস্টার নাজির বলেন, এবার পৌনে দুই মাস বাংলাদেশ সফর করলাম। সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানও মাসখানেক দেশে ছিলেন। আমাদের সফরের শেষ পর্যায়ে আমরা ভাবলাম সর্বশেষ একবার চেষ্টা করে দেখি না। কেবলমাত্র এই উদ্দেশ্য আমি ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল মহোদয়ের সাথে সাক্ষাত করি। সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় এটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট। তারাও আমাদের দাবীর প্রতি পরোক্ষভাবে সায় দিয়েছিলেন। আমরা বিনীতভাবে আমাদের দাবীর যৌক্তিকতা আইন উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল মহোদয়ের কাছে তুলে ধরি। এরপর বরফ গলা শুরু হয়। তিনি আশ্বাস দেন এটির সমাধান করবেন। আমরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্ধে ছিলাম যে আশ্বাস কি আশ্বাসের মধ‍্যেই থাকবে! পরে সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান লন্ডনে চলে আসেন এবং আমি সিলেট যাই। কয়েক দিন পর হংকং হয়ে লন্ডন ফিরি ২১ জানুয়ারি। লন্ডন হিথ্রোতে ল‍্যান্ড করার পর মোবাইল অন করার সাথে সাথে আইন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারির ম‍্যাসেজ পেলাম। পরের দিন তার সাথে কথা বললাম। তিনি জানালেন ড. আসিফ নজরুল স‍্যার খুব জোর দিয়ে বলেছেন আপনার সাথে যোগাযোগ করে আপনারা কি চান তার একটা খসড়া নিয়ে আসতে। ওদিকে আইন উপদেষ্টা মহোদয়ের পিএস সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে ফোন করে তাগদা দিয়েছেন। এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা কি চাই তার একটি সংক্ষিপ্ত ব‍্যাখ‍্যা ও প্রয়োজনীয় খসড়া প্রেরণ করি ২৪ জানুয়ারি। এর ঠিক কয়েক দিন পর ৩০ জানুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে মিশনগুলোতে সার্কুলার পাঠানোর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের প্রবাসীদের দাবী সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়।

পরিবর্তিত নিয়ম ব‍্যাখ‍্যা করে ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দানের ক্ষেত্রে পূরাতন নিয়ম বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্টের পরিবর্তে নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলোর যে কোনো একটি ডকুমেন্ট দিলে চলবে: বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট; মেয়াধোত্তীর্ন হাতে লেখা বাংলাদেশি পাসপোর্ট/এমআরপি পাসপোর্ট; বিদেশী পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার্ড স্টীকার; জাতীয় পরিচয়পত্র; জন্ম সনদ; শিক্ষা সনদ; বাংলাদেশি জাতীয়তা জ্ঞাত হওয়া যায় এমন অন‍্য যে কোন সরকারী দলিল।

লিখিত বক্তব্যের শেষের দিকে ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ আন্তরিক ধন‍্যবাদ জানান সাহসী ও খ‍্যাতিমান সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে। তিনি বলেন, প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবির ব‍্যাপারে তার ভূমিকা ও আন্তরিকতা অগ্রগন‍্য। এছাড়া বিভিন্ন সময় এ নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে কাজ করেছেন ও সোচ্চার ছিলেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ। এর মধ‍্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী, জজ নজরুল খসরু ও বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা কেএম আবু তাহের চৌধুরী।

তরুন আইনজীবী আমিন চৌধুরীর পরিচালনায় লন্ডন স্কুল অব কমার্স এন্ড আইটির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন খ‍্যাতিমান সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান। লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান। অতিথিদের মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা কেএম আবু তাহের চৌধুরী, ব‍্যারিস্টার আতাউর রহমান, নাসরুল্লাহ খান জুনায়েদ ও ব‍্যারিস্টার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ