ফ্যাসিবাদের সূচনা ছিল ১/১১ এবং তারেক রহমানের গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ৭, ২০২৫ ৪:৪৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ৭, ২০২৫ ৪:৪৪ অপরাহ্ণ

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম
ফ্যাসিবাদ সাধারণত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দমন, বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন এবং একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের মাধ্যমে চিহ্নিত হয়। আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসনের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিপীড়নমূলকভাবে দমন করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
পুতিন, রুশ সরকার ও দুর্নীতি বিরোধী নেতা একটিভিস্ট আলেক্সি নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে পুতিন প্রশাসন। তার অপরাধ ছিল- তিনি সবসময়ই পুতিনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ ছিলেন এবং যিনি একটি মুক্ত রাশিয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
এদিকে, বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে বিএনপি’র তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব জনাব তারেক রহমান-এর ওপর ভারতীয় মদদপুষ্ট দেশীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় পথভ্রষ্ট কর্মকর্তা যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে; সেটিকে যখন আমলে আনি— আমরা তখন সেই নির্যাতন আমাদেরকে নাভালনিকে মনে করিয়ে দেয়। পার্থক্য হলো নাভালনি পরবর্তীতে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন আর তারেক রহমান মহান আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে সূদুর লন্ডনে নির্বাসিত হয়ে জীবন-যাপন করছেন দেড় যুগের ওপরে।
ভারতীয় মদদপুস্ট ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দীন সরকার ৭ মার্চ ২০০৭ তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে আটক করে। এরপর আটক অবস্থায় নির্মম অত্যাচারে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর জীবন নাশের সম্ভাবনাও দেখা দেয়। ওয়ান ইলেভেন সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো— দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওয়ান ইলেভেন সরকার ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে আনীত অভিযোগের জের ধরে তারেক রহমানকে অমানুষিক নির্যাতনের মুখোমুখি করে। পরবর্তীতে তাঁর শারীরিক অবস্থার ভয়াবহ অবনতি হলে আদালতের নির্দেশে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাঁকে লন্ডন পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক শেখ হাসিনা প্রায়ই নিজের বক্তব্যে তারেক রহমানকে উদ্ধৃত করতেন আপত্তিকর ভাষায় এবং তার প্রকাশিত ক্ষোভই বলে দিতো তারেক রহমানের প্রতি তার আক্রোশের পরিমাণ। হাসিনার প্রতিহিংসার ভয়াবহ রূপ গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আয়না ঘর উন্মোচনের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে সবকিছুই স্পষ্ট।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং ‘র’ মূলত প্রোপাগান্ডা শুরু করে ২০০১ এরপর থেকেই। এই প্রোপাগাণ্ডার পথ ধরেই সংঘটিত হয় সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন। ভারতের সাবেক রাষ্টপতি প্রণব মুখার্জির ‘কোয়ালিশন ইয়ার’ থেকে আমরা জানতে পারি— কতটা চতুরতার সাথে ঘটানো হয়েছিল ওয়ান ইলেভেন এবং সেই ধারাবাহিকতায় সেনা সমর্থিত সরকার অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আরোহণ করবার পূর্বেই তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বিদেশে গমন করলে স্বৈরাচারী হাসিনার রাহু থেকে আপাত মুক্তি লাভ করেন নির্বাসিত এক জীবনের বিনিময়ে। ২০০৯ সালে ৫৭ জন সেনা অফিসারের রক্ত রঞ্জিত হাসিনার হাত এবং গত দেড় দশকে দেশের শত শত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বারংবার। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসিত না হলে তাকেও হয়তোবা রুশ আইনজীবী আলেক্সি নাভনিলের পরিণতি বরণ করতে হতো।
লেখক: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অবঃ), সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
জনতার আওয়াজ/আ আ
