বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও তার প্রস্তাবিত সুরাহা - জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ১১:৩১, রবিবার, ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও তার প্রস্তাবিত সুরাহা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫ ৭:২০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫ ৭:২০ অপরাহ্ণ

 

ব‍্যারিস্টার রফিক আহমেদ, লন্ডন

বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধাগুলোর একটি হল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, অস্বচ্ছতা, এবং অকার্যকর ব্যবস্থাপনার কারণে কাজের গতি কমে যায়, জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়ে। তবে এসব সমস্যা দূর করতে সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে আমলাতন্ত্রকে একটি গতিশীল, আধুনিক ও জনবান্ধব ব্যবস্থায় রূপান্তর করা সম্ভব। নিচে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হলো।

আমলাতন্ত্রের সমস্যা চিহ্নিতকরণ

আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান সমস্যাগুলো হলো:

  1. অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ: অধিকাংশ প্রশাসনিক কার্যক্রম রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় ঢাকার উপর চাপ বেড়েছে।
  2. দীর্ঘসূত্রিতা: একটি ফাইল অনুমোদনে অযথা সময়ক্ষেপণ এবং বিভিন্ন স্তরে তা ঘুরপাক খায়।
  3. অস্বচ্ছতা: সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব এবং জবাবদিহিতার সংকট।
  4. তদবির ও প্রভাব: তদবির সংস্কৃতির কারণে মেধার চেয়ে প্রভাব বেশি প্রাধান্য পায়।
  5. পর্যাপ্ত প্রযুক্তি ব্যবহার না করা: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার সীমিত।

প্রস্তাবিত সুরাহা

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে নিম্নলিখিত প্রস্তাবনা কার্যকর হতে পারে:

১. সচিবালয়ের বিকেন্দ্রীকরণ

ঢাকার উপর চাপ কমাতে সচিবালয়কে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে স্থানান্তর করা উচিত। এতে:
• স্থানীয় জনসাধারণ সরাসরি প্রশাসনিক সুবিধা পাবে।
• ঢাকার জনচাপ কমে ট্রাফিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি হবে।
• সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ কাজের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে পারবে।

২. কাজের সময়সীমা নির্ধারণ

প্রতিটি ফাইল বা কাজের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা (অনধিক দুই সপ্তাহ) রাখতে হবে। কাজের অগ্রগতি মনিটর করার জন্য বিশেষ কর্মকর্তা নিয়োগ করা যেতে পারে।

৩. ডিজিটালাইজেশন ও ই-গভর্নেন্স
• সমস্ত আবেদনপত্র ও কাগজপত্র ডাকযোগে বা ইমেইলের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।
• কোন কাজ কোন কর্মকর্তা করছেন তা প্রকাশ না করে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সম্পন্ন করতে হবে।
• জনগণের সুবিধার জন্য একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা উচিত যেখানে তারা তাদের আবেদনপত্রের অগ্রগতি জানতে পারবেন।

৪. তদবির সংস্কৃতির অবসান

কোনো কাজের জন্য তদবির করা হলে আবেদনপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করার বিধান রাখা উচিত। এই ব্যবস্থা সবার জন্য সমান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।

৫. জবাবদিহিতা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

যে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাকে সাবধান করে পরবর্তীবার একই ভুলের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে। প্রয়োজনে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি পরিষ্কারভাবে চাকরির শর্তাবলিতে উল্লেখ করতে হবে।

৬. কর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ

সরকারি কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ উন্নত করতে:
• পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
• নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
• কর্মীদের কাজের চাপ সামলানোর জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

৭. নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা

নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো ধরনের তদবির বা প্রভাব খাটানোর চেষ্টাকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

৮. ছুটি ও অনুপস্থিতির নিয়মাবলি

সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি ও বিদেশ ভ্রমণের নির্দেশনা আপডেট করতে হবে। অনুপস্থিতি কালীন তাদের কাজ কিভাবে সম্পন্ন হবে তার একটি স্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে।

৯. ডাকবিভাগের পুনরুজ্জীবন

ডিজিটাল যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি ডাকবিভাগের মাধ্যমে নথি ও তথ্য পাঠানোর প্রক্রিয়াকে পুনরায় কার্যকর করতে হবে। এতে ডাকবিভাগের কার্যক্রম নতুনভাবে সচল হবে।

উপসংহার

উপরে প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমলাতন্ত্রের জটিলতা দূর করে এটি একটি গতিশীল, স্বচ্ছ এবং কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এর ফলে একদিকে জনসাধারণের ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে প্রশাসনিক কাজে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা আসবে। দেশের উন্নয়নে এই উদ্যোগগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ