বাংলাদেশে এমনটি কেন? : ড. এ কে আব্দুল মোমেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুলাই ৩০, ২০২৪ ৩:০০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুলাই ৩০, ২০২৪ ৩:০০ অপরাহ্ণ

জনতার আওয়াজ ডেস্ক
দুনিয়ার বহু দেশে আন্দোলন হয়, বিক্ষোভ হয়। তখন সময় সময় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে, জেলে পাঠায়। কিন্তু কোথাও এত লোক মারা যায় না, কোথাও এতসব সরকারি ও বেসরকারি জানমাল, গাড়ি-বাড়ি জ্বালাও-পোড়াও হয় না, অফিস আদালত ধ্বংস হয় না। আমাদের দেশে এমনটি হয় কেন? আমাদের দেশের প্রতি কি কোনও ভালোবাসা বা ঠান নাই?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাটি বড়ই দুঃখজনক। কিন্তু এমনটি হবার কথা ছিল না। সরকার চায় কোটা পদ্ধতির সংস্কার। ছাত্রসমাজ ও তাই চায়। উভয়ের নীতিগত অবস্থান এক ও অভিন্ন। তাহলে এত গোলাগুলি, এত রক্তক্ষয়, এত সম্পদ, এত গাড়ি-বাড়ি, এত অফিস আদালত, মেট্রোরেল, ডাটা সেন্টার, ইত্যাদি ধ্বংস করে কার লাভ? দেশের ক্ষতি, জনগণের ক্ষতি, এবং এক্ষতি পোষাতে অনেক অনেক মূল্য দিতে হবে। অনেক অনেক মা-বাবার স্বপ্ন ছেলেমেয়ে বড় হয়ে মানুষ হবে, দেশের সম্পদ হবে, দেশের মূখ উজ্জ্বল করবে এবং দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কিন্ত কিতে কি হলো?
আমরা আমাদের নতূন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলার প্রকল্প হাতে নিয়েছি তবে বিনা কারণে এমন মৃত্যু ও ধ্বংস কিসের আলামত? ছেলেমেয়েদের জেল জুলুম দিয়ে মানুষের দুঃখ ও ক্ষোভ কি কমানো যাবে?
সারা বিশ্বজুড়ে আমরা বদনামের ভাগী হলাম, সবাই তাজ্জুব এমনটি কেন হলো। সম্প্রতি আমি লাওসে “আসিয়ান ও এশিয়ান রিজিওন্যাল ফোরামে” (ARF) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। সেখানে বড় বড় দেশের প্রায় দেড় ডজন পররাস্টমন্থ্রী আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেন। বাংলাদেশ তো উন্নয়নের রোল মডেল, স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্টটি তারা ছাত্র আন্দোলন ধমন করতে পারলেন না কে? এমনটি হলো কেন?
আমাদের ট্রাম্প কার্ড হচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এবারে কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলনে আমাদের অর্থনীতিও বড় ধাক্কা খেল। সবাই প্রশ্ন করছে তবে কি এই উন্নয়ন মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনে নাই। কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ কি তাদের পুন্জিভূত ক্ষোভ ও হয়রানির বহিঃপ্রকাশ ঘটালো? দ্রব্যমূল্যের উধ্বগতি, রন্ধে রন্ধে দূর্নীতি, প্রতিটি কাজে আমলাতান্ত্রিক হয়রানি, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অব্যাবস্থা, লুঠপাট, বিদেশে সম্পদ ও টাকা পাচার, পুলিশের হয়রানি ও সামাজিক বৈষম্য, জবাবদিহিতার অভাব ইত্যাদি মানুষের জীবনকে কি করে তুলেছে দূর্বিসহ? তাই এত উন্নয়নের পরও, এতগুলো মেঘা প্রোজেক্ট সম্পূর্ন হবার পরও মানুষের মনে অশান্তি, ক্ষোভ ও অস্থিরতা।
জামাত-শিবির-বিএনপি সুযোগের অপেক্ষায় অবশ্যই থাকবে। তবে তাদেরে এ সুযোগ আমরা কেন দিলাম? বস্তূত: সিদ্ধান্তে সময় ক্ষেপন ও ঠেলাঠেলি এবং অতিকথন জনগণ পছন্দ করেছে বলে মনে হয় না।
এখন জাতি ও নেত্রীত্বের জন্য প্রয়োজন দোষারোপের মন মানসিকতা পরিহার করে খোলামনে আত্ম উপলব্ধি, আত্মবিশ্লেষণ এবং সেই মতে উদ্যোগ নেয়া। তাহলেই আমরা এই দুঃখজনক ও অকল্পনীয় বিস্ফোরণের কারণ যেমন জানতে পারবো, সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারবো। জাতি ও নেত্রীত্বের জন্য এ এক বড় চেলেঙ্জ।
তবে আমরা ভাগ্যবান আমরা এক জনমণপন নেত্রী পেয়েছি যিনি সকল প্রলোভন, সকল ভয়ভীতি, সকল হিংসা-বিদ্বেষ, সকল চাপের মুখে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত। তবে সঠিক তথ্য, (বাহবা পাওয়ার তথ্য নয়) ও সঠিক সুপারিশ গ্রহণের জন্য প্রয়োজন জনগণের সাথে আরো অধিকতর সংপ্রিক্ততা ও যোগাযোগ বাড়ানো।
আমাদের এতসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে এবং স্বাভাবিকভাবেই এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ হবে, জ্বালাও-পোড়াও হবে তার কিছুই কি তারা ঠের পায়নি? কেন?
যারা মারা গেছে বা আহত হয়েছে তাদের ভালোমন্দ দেখভাল করা আমাদের দায়িত্ব এবং বিশেষ করে সারা দেশে স্কুল-কলেজ, ও সামাজিক মাধ্যমে দেশের সম্পদ যাতে আগামীতে কেউ ধ্বংস না করে তার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালু করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।
লেখক: সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।
জনতার আওয়াজ/আ আ
