বিএনপিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে : কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ৮, ২০২২ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ৮, ২০২২ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতৃবৃন্দ চিরাচরিতভাবে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে লাগাতার মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের পর তারা এখন অতীতের মতো নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়েও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করছে।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দলটির দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছেন। অথচ বিএনপিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে এবং পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বিএনপি বার বার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, দেশবাসী ভুলে যায়নি, ১৯৯১ এর নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন হয়ে বিএনপি জাতির সাথে প্রতারণা করে এবং তিন জোটের রূপরেখাকে পদদলিত করে নতুন পোশাকে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটায়। মিরপুর, মাগুরা ও বগুড়াসহ জাতীয় সংসদের কয়েকটি আসনের উপ-নির্বাচন এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি তখন ভোট ডাকাতির ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বিএনপি’র স্বৈরচারী নীতির ফলে দেশবাসীর মনে সৃষ্টি হয় গভীর শঙ্কর। দেশবাসী নির্বাচনের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বিস্ফোরণ্মখ। তখন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানান।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপিকে পঞ্চম সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে সংবিধান সংশোধনের বিল উত্থাপনের দাবি জানানো হলে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, নিরপেক্ষ কে? পাগল আর শিশু ছাড়া নাকী কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না। যদি প্রশ্ন করি তাহলে এখন কেন পাল (তাদের ভাষায়) আর শিশুদের প্রতি আস্থা রাখতে চান? তাহলে কী জবাব দেবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা এখন তত্ত্বাবধায়কের কথা বলছে অথচ বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করেছিল। তখন বিরোধী দল ও দেশের সর্বস্তরের মানুষ ওই নির্বাচন বর্জন করে। তারপরও বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশিদদের দল ফ্রিডম পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করেছিল। ১৫০ জন নিরীহ দেশবাসীকে হত্যা করে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুককে বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়ে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু গণ আন্দোলনের মুখে কয়েক দিনের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল খালেদা জিয়ার সে সরকার। তখন ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়ে সংসদে মধ্যরাতে একক অধিবেশনে নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংযোজন করে বিএনপি। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দলের উপস্থাপিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা থেকে যায় উপেক্ষিত। প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় বসতে না বসতেই বিএনপি তাদের দলীয় রাষ্ট্রপতি রাজাকার আবদুর রহমান বিশ্বাসকে দিয়ে সেনাবাহিনীতে বিরোধ সৃষ্টি করে এবং দেশে সামরিক ক্যু ও পাল্টা ক্যু ঘটিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। একই সাথে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে আবার ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে বিএনপি বার বার নানা ধরনের চতুরতা ও জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ২০০৬ সালেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে নিজেদের আজ্ঞাবহ ও দলীয় লোক বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের
অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে বিএনপি। অন্যদিকে আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তারা। কিন্তু গণ আন্দোলনের মুখে মুখ থুবড়ে পড়ে বিএনপির এসব অপতৎপরতা। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের মতো আরেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চক্রান্তে লিপ্ত হয় বিএনপি। সংবিধান উপক্ষো করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ঘোষণা করেন। এরপর তিনি আকস্মিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশকে ঠেলে দেন এক ভয়াবহ সঙ্কটে। এ অবস্থা চলতে থাকে ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ১০ দিনের পরিবর্তে টানা ২ বছর ক্ষমতা দখল করে থাকে ওয়ান-ইলেভেনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আর বিএনপি ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বার বার বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য মায়া কান্না করে। বিএনপি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশের পবিত্র সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও পবিত্র সংবিধান লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে যে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যতীত সংবিধান অনুযায়ী কেউ দেশ শাসনের যোগ্য নয়। তাই অনির্বাচিত গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায় না। গণতন্ত্রকে এক মুহূর্তের জন্যও পরিত্যাগ করা যায় না, কারণ এটি সংবিধানের একটি মৌলিক জ্ঞ। বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র এর রাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য গণতান্ত্রিক, জনগণই এই প্রজাতন্ত্রের মালিক। এগুলো সবই সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আরও বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক ধরনের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সরকার ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে যা গণতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি এখন একটি Dead ইস্যু এবং Past and closed chapter জল বহু দূর গড়িয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সেই একই জায়গায় হাবুডুবু খেতে থাকলে বিএনপিকে গভীর জলে ডুবে মরতে হবে। গণতন্ত্রের নৌকা বহুদূর এগিয়ে গেছে, তাতে উঠতে হলে অনেকটা পথ সাঁতরে পাড়ি দিতে হবে। এখনও সময় আছে, বিএনপিকে সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঠিক ধারায় পথ চলার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পবিত্র সংবিধান হলো দেশের অস্তিত্ব, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষা কবচ। সংবিধান অনুযায়ীই এদেশের সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে এবং যথা সময়েই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। বিএনপি যদি তথাকথিত আন্দোলনের নামে এদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং আবারও ২০১৩-১৪-১৫ ও ২০১৮ সালের মতো অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে চায় তাহলে তাদেরকে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।