বিশ্ব রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতির ৪টি চমকপ্রদ তথ্য - জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ৬:০৪, সোমবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

বিশ্ব রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতির ৪টি চমকপ্রদ তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: রবিবার, মার্চ ৯, ২০২৫ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: রবিবার, মার্চ ৯, ২০২৫ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ

 

জনতার আওয়াজ ডেস্ক
গত শতাব্দীতে রাজনীতিতে নারীরা অর্জন করেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অগ্রগতি। নারীরা পেয়েছে ভোটাধিকার এবং প্রায় সব দেশের সংসদীয় আসনে তাদের জয় এসেছে।

তবে প্রতিনিধিত্বের জায়গায়, বিশেষ করে সর্বোচ্চ পদগুলোতে এখনো তাদের সংখ্যা কম। বিশ্ব রাজনীতিতে নারীদের বিষয়ে চারটি চমকপ্রদ তথ্য এখানে তুলে ধরা হলো।

১. প্রায় সব জায়গাতেই ভোটাধিকার লাভ করেছে নারীরা

বিংশ শতাব্দীর আগে যেখানে অল্পসংখ্যক নারীর ভোটাধিকার ছিল, শতাব্দীর শেষ নাগাদ সেই পরিস্থিতি পুরোটাই বদলে গেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অল্পসংখ্যক নারীরই কেবল ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না।

এই শতাব্দীতেও কিছু দেশ ভোটাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল, যার মধ্যে সবশেষ দেশ ছিল সৌদি আরব। দেশটিতে ২০১৫ সালে স্থানীয় নির্বাচনে নারীদের ভোটের অধিকার দেওয়া হয়। (সৌদি আরবে জাতীয় নির্বাচন হয় না।) এটা জাতিসংঘের তথ্য। এর মানে দাঁড়ায় যে প্রতিটি দেশে নারীদের ভোট দেওয়ার আইনি অধিকার ছিল।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পুরুষের জন্যও সার্বজনীন ভোটাধিকারের বিষয়টি বিরল ছিল। কিন্তু কিছু দেশে পুরুষেরা যখন ভোটাধিকার পাওয়া শুরু করে, তখনো বড় পরিসরে বাদ পড়েছিলেন নারীরা। ১৮৯৩ সালে নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার দেওয়া প্রথম দেশ ছিল নিউজিল্যান্ড। (সেই সময় ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকা দেশটি ছিল স্বশাসিত।)

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল চেঞ্জ ডেটা ল্যাবের প্রকল্প প্রধান বাস্টিয়ান হের বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশে পুরুষদের ভোটের অধিকার ছিল, আর নারীদের ভোটাধিকার ছিল মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ দেশে। বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দশকগুলোতে অনেক দেশের নারীদের প্রতি ভোট বৈষম্য দূর হয় এবং অন্য দেশগুলোতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ভোট দেওয়ার অধিকার লাভ করে। এর মাধ্যমে ভোটাধিকার নিয়ে যে বৈষম্য ছিল তা দ্রুত কমে যায়।

অনেক আফ্রিকান দেশে স্বাধীনতার পর নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। অন্য কিছু দেশে এ নিয়ে বিধিনিষেধ অনেক দিন পর্যন্ত রয়ে যায়। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং পুরুষ ভোট দিতে পারতেন না, আবার সুইজারল্যান্ডে ১৯৭১ সালের আগে নারীদের ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অনুমতি ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা প্রথম ভোট দেয়ার সুযোগ পান ১৯৯৩ সালে।

তবে কাগজে-কলমে ভোট দেওয়ার অধিকার থাকা আর সেই অধিকার ব্যবহার করতে পারা ভিন্ন বিষয়।

স্বাধীন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ বলছে, কিছু দেশ বা অঞ্চলে নারীদের ভোট দেওয়ার আইনি অধিকার থাকলেও সামাজিক রীতি, ভোটকেন্দ্রে হয়রানি ও সহিংসতা কিংবা স্বামীদের চাপের কারণে তাদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়।

সংস্থাটি উল্লেখ করেছে যে, মিশরে প্রায় সাধারণ যুক্তিতেই ভোটারদের পরিচয়পত্র দেখানোর নিয়ম রয়েছে। তবে খুব স্বাভাবিকভাবেই পুরুষদের তুলনায় নারীদের পরিচয়পত্র কম থাকে। আর যদি থাকেও তবে বেশিরভাগই তা রাখা থাকে তাদের স্বামীর কাছে, যার ফলে নারীর ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন স্বামী।

২. কেবল তিনটি দেশের সংসদে নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ

বৈচিত্র্যশীল গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করা সুইডেনভিত্তিক প্রকল্প ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসির (ভি-ডেম) তথ্যমতে, বিশ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত জাতীয় সংসদে নারীরা পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৯০৭ সালে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে ফিনল্যান্ড।

এরপর খুব ধীর গতিতে বিশ্বব্যাপী রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে, তবে বিশ শতকের শেষের দিকে এবং একুশ শতকের শুরুতে এই হার বেড়ে যায়। ২০০৮ সালে পৃথিবীর প্রথম নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ দেখা যায় রুয়ান্ডায়।

মার্কিন থিংক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (সিএফআর) নারী এবং বৈদেশিক নীতি কর্মসূচী দ্বারা পরিচালিত উইমেন্স পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে আজ – রুয়ান্ডা, কিউবা, এবং নিকারাগুয়া – কেবল এই তিনটি দেশের সংসদে নারীরা ৫০ শতাংশের বেশি আসন দখল করে আছে।

সূচক অনুযায়ী, আরও তিনটি দেশ – মেক্সিকো, আন্দোরা এবং ইউএই – তাদের আইনসভায় ৫০/৫০ লিঙ্গ সমতা অর্জন করেছে।

সিএফআর’র উইমেন্স পাওয়ার ইনডেক্সের নোয়েল জেমস বলেন, এই শীর্ষ ছয়টি দেশের মধ্যে পাঁচটির একক/নিম্নকক্ষে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য আইনিভাবে কিছু কোটা আছে। একমাত্র কিউবায় তা নেই।

নোয়েল জেমসের মতে, লিঙ্গ সমতা অর্জনে রুয়ান্ডার সাফল্যের কারণ ১৯৯৪ সালের গণহত্যা পরবর্তী সময়। সেসময় দেশটিতে নারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আর দেশ পুনর্গঠনে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। মেয়েদের জন্য ভাল শিক্ষা ব্যবস্থাও একটি সহায়ক উপাদান ছিল, বলেন জেমস।

আইন অনুযায়ী ইউএই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংসদে ৫০ শতাংশ নারী থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এদের অর্ধেক নির্বাচিত আর অর্ধেক মনোনীত হয়। আর সবশেষ নির্বাচনে দেশটির কেবল অর্ধেক নাগরিককে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল।

ইউএন উইমেন বলছে, অনেক দেশেই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে চাওয়া নারীদের জন্য নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সংস্থাটির বক্তব্য হচ্ছে, ক্ষতিকর রীতিনীতি এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নারীদের রাজনৈতিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এবং মিডিয়ার সৃষ্ট বাঁধাধরা দৃষ্টিভঙ্গি নারীদেরকে পুরুষের চেয়ে কম উপযুক্ত ও সক্ষম নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে।

সংস্থাটি বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বাধা দেয়। এছাড়াও এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে নারীরা প্রায়ই আর্থিক নেটওয়ার্ক এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থেকে বঞ্চিত হন, যা তাদের রাজনীতি থেকে বাদ দিতে পারে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

বর্তমানে, আফগানিস্তান, আজারবাইজান, সৌদি আরব, হাঙ্গেরি, পাপুয়া নিউ গিনি, ভানুয়াতু, ইয়েমেন এবং তুভালু – এই আটটি দেশের জাতীয় সংসদে কোনো নারী নেই।

৩. পনেরো শতাংশেরও কম দেশ নারী নেতৃত্বাধীন

ওমেন্স পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৪ সালের পয়লা ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র ২৬টি দেশ নারী প্রধান বা সরকার প্রধান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যা বিশ্বের মোট দেশগুলোর ১৫ শতাংশেরও কম। আর কেবল ১৫টি দেশের নারীরা সরকারের অধিকাংশ বা অর্ধেক অংশ দখল করে আছে।

৪. ১৯৪৬ সাল থেকে ৮০টি দেশে নারী নেতৃত্ব ছিল

উইমেন্স পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৯৪৬ সাল থেকে বিশ্বের ৮০টি দেশের তাদের রাষ্ট্রপতি বা সরকার প্রধান নারী ছিলেন, যা মোট দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ।

১৯৬০ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বান্দারানায়েকের আগ পর্যন্ত রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের সবাই ছিলেন শাসকগোষ্ঠীর কেউ যারা উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতা পেয়েছিলেন।

বাস্টিয়ান হের বলছেন, তারপর থেকে আরও অনেক দেশ তাদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নারীদের পেয়েছে। এটি এমন একটি প্রবণতা যা মূলত গণতন্ত্র দ্বারা চালিত। তবে, সর্বোচ্চ পদের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা এখনও অনেক কম। প্রায় সকল প্রধান রাজনৈতিক পদ পুরুষরা দখল করে আছেন।

নারীর প্রতিনিধিত্ব কেন গুরুত্বপূর্ণ

গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাজনীতিতে নারীদের সংখ্যা বাড়লে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। ২০২১ সালের কোলোরাডো বোলডার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দেখা গেছে, সংসদে নারীরা প্রভাবশালী হলে সাধারণত দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ বাড়ে।

একইভাবে ২০২০ সালের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর সংসদে নারীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বৃদ্ধি এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাসের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার কারটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সুপারিশ করেছিলেন, যেসব সংসদে নারীর সংখ্যা বেশি, সেসব সংসদ শক্তিশালী জলবায়ু নীতিমালা তৈরি কতে পারে।

তবে সিএফআর’র উইমেন্স পাওয়ার ইনডেক্সের জেমস সতর্ক করে বলেন যে, নারীদের নির্বাচিত করাই এই ফলাফলের নিশ্চয়তা দেয় না।

তার যুক্তিতে, নারীরা কোনো সমজাতীয় গোষ্ঠী না– ফলে সবাই লিঙ্গ সমতা, শান্তি বা সহযোগিতার পক্ষে সমর্থন করবে না।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ