ভারত সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় দেয়নি: সাইফুল হক
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, এপ্রিল ১১, ২০২৫ ৫:৩৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, এপ্রিল ১১, ২০২৫ ৫:৩৮ অপরাহ্ণ

জনতার আওয়াজ ডেস্ক
কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি এককভাবে ভারত বন্ধ করতে পারে না মন্তব্য করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক এবং গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেছেন, ‘ভারতের কোনো সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় দেয় নাই। এটা বন্ধুত্বের কোনো নমুনা নয়।’
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ জমানার মতো ভারত যদি বাংলাদেশকে ক্লাইন্টস্টেট করতে চান, যদি মনে করেন বাংলাদেশ আপনাদের (ভারত) অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে, এই চেতনা থেকে আপনারা বেরিয়ে আসেন। হাসিনার চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখলে আপনারা ভুল করবেন। বাংলাদেশের বিশেষ দলের সাথে সম্পর্ক তৈরি না করে, দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিপ্লবী যুব সংহতি’র উদ্যোগে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, দু’দিন আগে দেখলাম, ভারত আমাদের এখানে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা যেটুকু বাণিজ্যিক সুবিধা পেতাম, সেটা তারা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এই ট্রান্সশিপন্টমেন্ট দিয়ে নেপাল, ভুটানের মতো দেশে বাণিজ্যিক পণ্য রপ্তানি করতে পারতাম। এভাবে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি এককভাবে ভারত বন্ধ করতে পারে না। এটা ভারতের কোনো সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় নয়। এটা বন্ধুত্বের কোনো নমুনা নয়।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে ব্যাংককে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের উপদেষ্টা যে বৈঠক হয়েছে, তাতে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম যে, আট মাস পরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে বরফ, সেই বরফ কিছুটা গলতে শুরু করেছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, ভারত কার্যত সেই বৈঠকের পর থেকে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভারত একতরফাভাবে এরকম আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করতে পারে না।
উপদেষ্টাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের রামপাল যে বিদ্যুৎ প্রকল্প, যেটা ভারতের স্বার্থে নেয়া হয়েছিল, এরকম প্রকল্পগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত যাবতীয় দেশবিরোধী, নিরাপত্তা বিরোধী চুক্তি হয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করা দরকার। যেগুলো জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি সেগুলো বন্ধ করা দরকার। ভারতের সাথে আলাপ-আলোচনা করে, আমরা আমাদের যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করতে চাই।
সাইফুল হক বলেন, গতকালকে আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সরকারকে নাকি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা দরকার। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কে বলতে চাই- আপনি কি সরকারের মনের কথা নিজের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেন? সরকারের মনের কথা যদি আপনি নিজে উচ্চারণ করে থাকেন, তাহলে সরকারের উচিত হবে এই কথাটি পরিষ্কারভাবে দেশবাসীকে জানানো।
গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, ফিলিস্তিনে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে, এই জায়নবাদী হামলা-আক্রমণের বিরুদ্ধে পুরো বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আমাদের সরকারকে বলতে চাই, দুই-তিনটা কাজ আপনারা করতে পারেন। প্রথমত- আমাদের পাসপোর্টে আগে যেভাবে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পাসপোর্টে এখন সেভাবে উল্লেখ থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত- হাসিনা সরকার ইসরায়েলের আড়িপাতা যন্ত্র ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং কোম্পানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি করেছিল।
তিনি বলেনম, গত ১৫ বছর তারা আমাদের উপর গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে ইসরায়েলি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। যেভাবে এসকল প্রযুক্তি আমদানি করা হয়েছে, এগুলো খোলামেলা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করে বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করার নামে যেভাবে বাটাসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে যে হামলা করা হচ্ছে, মব সন্ত্রাস যেভাবে জেগে উঠেছে এটাকে বন্ধ করতে হবে। এভাবে ইসরায়েলকে মোকাবেলা করা যাবে না, এভাবে জায়নবাদীদেরকে মোকাবেলা করা যাবে না। এভাবে একটা মব সন্ত্রাস চালিয়ে এই সংকটের সমাধান করা সম্ভব নয়। এগুলোর কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বাইরে একটা নেতিবাচক বার্তা যাবে। যখন বাংলাদেশে একটা বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে। যখন শতশত বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আসছে, তখন যদি এরকম মব সন্ত্রাস চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি কোম্পানি আস্থা পাবে না। মব সন্ত্রাসের নামে লুটপাটের যে তৎপরতা চলছে, কোনভাবে এটাকে বরদাস্ত করা যাবে না।
এ সময় আয়োজক সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জনতার আওয়াজ/আ আ
