সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারেনি
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪ ৫:১৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪ ৫:১৪ অপরাহ্ণ
জনতার আওয়াজ ডেস্ক
আইন সবার জন্য সমান, এটা আমরা সবাই বলি কিন্তু এটা কতটা মানা হয়? দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছরেও সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারে নি। যে ঘটনা আমাদের পুরো জাতিকে পরিবর্তন করে দেয়, পুরো জাতির আকাঙ্খা পূরণ করে দেয়, সেটা যদি সংবিধান ধারণ না করে তাহলে এটা কেমন সংবিধান?
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ৫৩ বছরে সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারেনি। এই দেশে মানুষ ভোট দিয়েছে কিন্তু যারা ক্ষমতায় গেছে তারা বিষয়টিকে এমনভাবে কুক্ষিগত করেছে, বাকি যারা সাধারণ মানুষ তারা নিজেদের রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে মনে করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, আইনে কি আপনি লিখছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবে কি করছেন। আইন সবার জন্য সমান এটা আমরা সবাই বলি কিন্তু এটা কতটা মানা হয়? সংবিধান সংশোধন করেন আর নতুন করে লিখেন তাতে কিছুই হবে না যদি না রাজনীতিবিদরা আপ্ত বাক্য হিসেবে মানেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমরা যদি নতুন করে সংবিধান লিখতে চাই তাহলে আমাদের সামনে গণপরিষদের প্রশ্ন আসবে, সে গণপরিষদে সদস্য কারা হবেন সে প্রশ্ন আসবে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজি কি না সে প্রশ্ন আসবে। এই মুহুর্তে আমরা ঐক্যমতে আসতে পারবো কি না সে প্রশ্নও আসবে। সেখানে আমরা ঐক্যমতে আসতে না পারলে সংকট প্রকট হবে এমন ভয় আমার মধ্যে আছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে কেউ যদি নতুন সংবিধান করতেও চায় সেটা আকাশ থেকে নতুন করে শুরু করবে তা না। সুতরাং আমাদের যে কনটেক্সট সেটা আমরা বাদ দিতে পারবো না। এটা রেখেই আমাদের শুরু করতে হবে। সেই জায়গা থেকে সংবিধান যদি উইল অফ দ্যা পিপল হয় তাহলে সেটা কিভাবে ঠিক করব। আমার কাছে মনে হয় এটা পলিটিকাল উইশডম থেকে ঠিক করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দবস্ত দরকার নতুন রিপাবলিক দরকার। এই বিষয়ে সম্ভবত সবাই একমত হবে। কিন্তু এর ক্যারেক্টর কি একটা গণতান্ত্রিক রিপাবলিক একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সে ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটার ভিত্তি কি হবে…সংবিধান নতুন চাই অথবা সংস্কার চাই; একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান চাই সে ব্যাপারে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, দেশে যখন কোন বিপ্লব হয় সেটা কি সংবিধান মেনে হয়? যদি না হয়, ২৪ এর গণ অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনে বড় এক ঘটনা তাহলে সংবিধান কি এটা ধারণ করে? কেন করে না? সংবিধান কি বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থানের কোন অপশন রাখে না? যে ঘটনা আমাদের পুরো জাতিকে পরিবর্তন করে দেয়, পুরো জাতির আকাঙ্খা পূরণ করে দেয় সেটা সংবিধান ধারণ করে না তাহলে এটা কেমন সংবিধান?
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কি সংবিধানের আলোকে হয়েছিলো প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট যে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলো এটা কি সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে? তাহলে আমরা যেটাকে সংবিধান বলছি, যা আমাদের পুরো জাতিকে দিকনির্দেশনা দিবে, যা যা করতে হবে এই অনুযায়ী আমরা করবো। কিন্তু এটা তো আমরা করলাম না তাহলে সংবিধান লঙ্ঘন করাই কী সংবিধানের সর্বোচ্চ প্রতিপালন?
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আন্দোলন শেষ হবার দুই মাস পুরণ হবার আগেই বিভক্তি শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনে কার কতজন শহীদ হয়েছে, কে আন্দোলনের প্রবক্তা, কোন দলের কতটা অবদান সে নিয়ে কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আন্দোলনের স্পিরিটে তো এটা ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের পরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধাকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনে প্রমুখ।