সততা ও মেধা দিয়ে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে হবে সামনের পথ চলা !
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪ ৭:৪৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪ ১২:৫৯ অপরাহ্ণ
রাজনীতি দখলবাজিকে চালায় নাকি দখলবাজি রাজনীতিকে চালায় এই প্রশ্ন অনেক আগে থেকেই এই দেশে ‘ডিম আগে নাকি মুরগি আগে’র মতো ধাঁধা হয়ে আছে। এখানে ক্ষমতায় থাকলে দখলদারির পথ পরিষ্কার থাকে; আবার দখলদারির হাত ধরেই ক্ষমতায় যেতে হয়। এই বাস্তবতাকে এত দিন সবাই নিয়তি জ্ঞানের মতো মেনে নিয়েছিল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘সম্ভাব্য সুদিনেও’ ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি। আগামী নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তাবনা ও দলীয় নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে দলটিকে। রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ এখন কঠিন সংকটে। এর মধ্যেই এবারের নির্বাচনে সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় নামতে হতে পারে বিএনপিকে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলকে নিয়ে ইসলামী ফ্রন্ট এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-তরুণদের সম্ভাব্য নতুন দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটিকে।
একই সঙ্গে বিএনপিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে হবে দেশকে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশের সামরিক-বেসামরিক শক্তি ও সুশীল সমাজের সমর্থন আদায়ও করতে হবে।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে আন্দোলন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদের একতরফা নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনে বদলে যায় দৃশ্যপট। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারামুক্ত হন। রাজনৈতিক মামলায় দলের কারাবন্দি সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। কিন্তু এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে। এতে দলটি আবার জনপ্রিয়তা হারানোর চ্যালেঞ্জে পড়েছে। যদিও দলটির হাইকমান্ড কঠোর অবস্থান নিয়ে অনেককে বহিষ্কার করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিকে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হতে হবে। বিগত দিনে দেওয়া ৩১ দফা রূপরেখা যে কথার কথা নয়, তা প্রমাণ করতে হবে কাজের মাধ্যমে। তাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো নতুন আঙ্গিকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রজ্ঞা প্রদর্শনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায়, ভবিষ্যতে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে দলটি।
বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতাদের মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতার মধ্য দিয়ে বিএনপির ১৫ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। ছাত্র-জনতার নির্দলীয় নেতৃত্ব মেনে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছিল দলটি। এ আন্দোলনে নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির উত্থান ঘটেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনেও নিয়েছে।
তাদের মতে, ফ্যাসিবাদী বনাম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যে মেরূকরণ ছিল, তা শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার নতুন মেরূকরণ তৈরি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে এসেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের মানুষও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিকে তুলনা করছে। বিশেষ করে দুই দলের নেতাকর্মীর কার্যক্রমকে অনেকেই একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বলে অভিহিত করছেন। এ পরিস্থিতিতে সারাদেশে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারির অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে শুরু করেছে বিএনপি। যদিও দলটির শীর্ষ নেতারা এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন দাবি করে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তুলে ধরছেন।
বিএনপির এখন সম্ভাব্য সুদিন। তবে একই সঙ্গে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ায় চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছে তারা। বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। তারা অতীতেও ক্ষমতায় ছিল। আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষ কে হবে, সেই প্রস্তুতি তাদের নিতে হবে। কয়েকটি ইসলামী দলের ফ্রন্ট হতে পারে। এতে জামায়াত থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের বিলুপ্তির দাবি উঠেছে, প্রধান উপদেষ্টা তা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন হতে পারে। নতুন খোলসে আবির্ভূত হতে পারে। একই সঙ্গে ছাত্র-তরুণদের নতুন দল করার গুঞ্জনও রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক রকম অভিজ্ঞতা আছে। মিল রয়েছে। দুর্নামও রয়েছে।
সামনের নির্বাচনে ভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা হবে। ছাত্ররা স্মার্ট। তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ। দুর্নাম নেই। গণবিস্ফোরণের সফলতার দাবিদারও। ফলে বিএনপিকে নতুন করে আবির্ভূত হতে হবে সফলভাবে প্রতিযোগিতা করার জন্য। নতুন বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল হতে হবে। এখন ঝুঁকি নেই। গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ নীতি-আদর্শের দল হিসেবে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দায়বদ্ধ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে পারে। এতে চাঁদার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দলীয় বড় ফান্ডও করতে পারে। তবে দুর্বৃত্ত ও দুর্নাম থাকাদের সদস্য করা যাবে না। কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রতিটি স্তরে কমিটি গঠন করতে হবে। এখন যারা চাঁদাবাজি করছেন, তাদের বাদ দিতে হবে।
জাতির প্রত্যাশা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আশেপাশে যোগ্য ও নিবেদিত প্রাণ সৎ নেতৃত্ব খুবই প্রয়োজন , কারন সঠিক ও যোগ্য সৎ নেতৃত্ব একটা রাজনৈতিক দলকে সাধারণ জনতার কাছে পৌঁছে দিতে সহায়কের ভূমিকা রাখে।
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে যে দলটির সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর, সেই দলটিই আজ আবার গণতন্ত্রের নতুন দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে এগিয়ে যাবে নতুন প্রজন্মের জন্য আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। অদূর ভবিষ্যতে এটি হবে এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে না ক্ষমতার দম্ভ অথবা আস্ফালন, থাকবে না অত্যাচার-নির্যাতন, থাকবে না দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি। সেখানে থাকবে মেধার মূল্য, যেখানে মানুষ বুকভরে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেবে, যেখানে কথা বলার অধিকার থাকবে, থাকবে ভোটের অধিকার, সর্বোপরি থাকবে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, যেখানে স্বৈরাচারী সরকারের বুলেটের গুলিতে আর কাউকে প্রাণ দিতে হবে না। এ মহান আদর্শে বিশ্বাসী হয়েই বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে যাবে। আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে বিএনপি অতীতের ভুলভ্রান্তি দূর করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখকঃ আব্দুল আজিজ
সম্পাদক জনতার আওয়াজ ডটকম