সাংবাদিকদের দায়: হাসিনাকে দানব হয়ে উঠতে সাংবাদিকদের ভূমিকা
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ৯, ২০২৫ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ৯, ২০২৫ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ

ব্যারিস্টার রফিক আহমেদ
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, যা সমাজের আয়না হিসেবে কাজ করে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া, জনগণের অধিকার রক্ষা করা এবং শাসকগোষ্ঠীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু যখনই এই পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের নৈতিকতা ও দায়িত্ব বিসর্জন দিয়ে স্বার্থসিদ্ধির পথে পা বাড়ান, তখনই তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে একাংশ সাংবাদিকের ভূমিকা এই প্রসঙ্গে আলোচনার দাবি রাখে। হাসিনাকে একটি “দানবীয়” রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে একাংশ সাংবাদিকের ভূমিকা কোন অংশেই কম নয়।
সাংবাদিকতার নৈতিকতা বিসর্জন
সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি হলো সততা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের একাংশ সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের অনৈতিক কাজে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছেন, এমনকি কখনো কখনো সেগুলোকে বৈধতা দিতেও পিছপা হননি। এই ধরনের সাংবাদিকরা ক্ষমতার তেল মেখে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির পথ প্রশস্ত করেছেন, যা সমাজে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পরিবেশকে ধ্বংস করেছে।
অন্যায় কাজে উৎসাহ প্রদান
ক্ষমতাসীনদের অন্যায় কাজে উৎসাহ প্রদান করা একাংশ সাংবাদিকের আরেকটি বড় অপরাধ। তারা সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশে ভয় পেয়েছেন, বরং সরকারের প্রশংসায় মত্ত থেকেছেন। এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগগুলোকে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে চেপে গেছেন বা সেগুলোকে ভিত্তিহীন বলে প্রচার করেছেন। এই ধরনের কাজ শেখ হাসিনার সরকারকে আরও অনিয়ন্ত্রিত ও দানবীয় করে তুলতে সাহায্য করেছে। সাংবাদিকদের এই ভূমিকা শুধু পেশাগত নৈতিকতাই লঙ্ঘন করেনি, বরং এটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তেলবাজি ও স্বার্থসিদ্ধি
একাংশ সাংবাদিকের তেলবাজি ও স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা তাদের পেশাগত সততাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তারা সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা, পদোন্নতি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য সরকারের অনৈতিক কাজগুলোকে সাদা চোখে দেখেছেন। এমনকি কিছু সাংবাদিক সরাসরি সরকারের প্রচারণার অংশ হয়ে গেছেন, যা তাদের পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ধরনের সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার সরকারকে একটি দানবীয় রূপ দিতে সহায়তা করেছেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে।
আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান
যে সকল সাংবাদিক তাদের পেশাগত নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাদের কাজ শুধু পেশাগত নৈতিকতাই লঙ্ঘন করেনি, বরং এটি দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য একটি বড় হুমকি। আইনের চোখে সবাই সমান, এবং যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন, তাদেরও আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
উপসংহার
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, যা সমাজের কল্যাণে কাজ করে। কিন্তু যখনই এই পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে স্বার্থসিদ্ধির পথে পা বাড়ান, তখনই তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। শেখ হাসিনার সরকারকে একটি দানবীয় রূপ দিতে একাংশ সাংবাদিকের ভূমিকা কোন অংশেই কম নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের কাজে লিপ্ত হতে না পারে। সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও সততা রক্ষা করাই হোক আমাদের সকলের লক্ষ্য।
জনতার আওয়াজ/আ আ
