সিলেটে ভোটের মাঠে হঠাৎ করে নীরবতা আলোচনাও নেই - জনতার আওয়াজ
  • আজ ভোর ৫:১৩, সোমবার, ২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

সিলেটে ভোটের মাঠে হঠাৎ করে নীরবতা আলোচনাও নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: মঙ্গলবার, মে ২৩, ২০২৩ ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: মঙ্গলবার, মে ২৩, ২০২৩ ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

 

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

হঠাৎ করে নীরবতা। আলোচনাও নেই। আগ্রহ কমে গেছে। অথচ বিগত দুই টার্ম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেশজুড়ে ছিল আলোচিত। আরিফ-কামরান লড়াই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সবার চোখ ছিল সিলেটের দিকে। এবারো এর ব্যতিক্রম ছিল না। যতক্ষণ পর্যন্ত আরিফের ঘোষণা আসেনি ততক্ষণ পর্যন্ত ভোটের মাঠে নানা জল্পনা। সবাই ছিলেন অপেক্ষায়।

কী সিদ্ধান্ত দেন আরিফ। সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে। ভোটে নেই আরিফ। ঘোষণা দিয়ে সরে গেছেন। শুধু সরেই যাননি, এখন তার টার্গেট হচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া বিএনপি’র নেতাদের মাঠ থেকে সরানো। রোববার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তার ‘মিশন’। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এতে ফল পাচ্ছে বিএনপি। মহানগর বিএনপি’র নেতারা যা পারেননি, আরিফ তাই করছেন।
একে একে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন বিএনপি’র কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে নেই। এতে করে মাঠে ইমেজ হারালো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তার উপর কাউন্সিলররাও মাঠ থেকে সরে যাচ্ছেন। এতে করে এখন পাড়া-মহল্লায়ও সেই ভোটের আমেজ কমে যাচ্ছে। জৌলুসও হারাচ্ছে এই নির্বাচন। তবে বিএনপি ঘরানার কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে থেকে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে যেসব ওয়ার্ডে বিএনপি’র নেতারা প্রার্থী হিসেবে থাকছেন সেসব ওয়ার্ডে এখনো সরব ভোটের মাঠ। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘বেশির ভাগ কাউন্সিলর প্রার্থী গতকাল বিকাল পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখনো নির্বাচনে আছেন। আমরা তাদের কাছে যাচ্ছি। কথা বলছি। এতে সাড়াও মিলছে।

যারা এখনো ভোটে আছেন তারা সরে যাচ্ছেন। আর যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তারাও প্রত্যাহার করে নেবেন।’ আরিফ ধারণা করেন; ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবে না। প্রস্তুত মাঠ ছেড়ে দিতে অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে। এরপরও দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তারা নির্বাচনে থাকবেন না।’ সিলেট সিটি করপোরেশনের কয়েকজন বিএনপি নেতা ও কাউন্সিলর প্রার্থী জানিয়েছেন, ‘কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় নয়। এরপরও দলের নেতারা অনুরোধ করছেন। এ কারণে তারা নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন। ১৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা দিনার খান হাসু আমেরিকা থেকে এসেছিলেন নির্বাচন করতে। প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। গতকাল বিকালে তিনি নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এর আগে চার বারের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। নির্বাচনের মাঠ থেকে শক্তিশালী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সরে যাওয়ায় ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন না হলে ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দ দেখানোর জায়গা থাকে না। এ কারণে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ‘খেল’ হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন জানিয়েছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ভোটারদের মতামত নিয়ে ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু ইলেকশন কমিশন এগুলোতে না গিয়ে উপস্থিত সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে।

এটা সাধারণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বাংলাদেশের ভোটারদের প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা এমন পর্যায়ে নয় যে, ইভিএমকে তারা সহজে গ্রহণ করতে পারবে।’ তিনি বলেন- ‘স্বাধীনতার পর থেকে আমরা জানি কোনো নির্বাচনই ফেয়ার হয়নি। কিন্তু কম বেশি আছে। এই কম বেশির তুলনায় দেখা যায় ইতিমধ্যে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে এগুলোতে ফ্রি, ফেয়ারের নামগন্ধও নেই। এ বছর দেখেন আমাদের সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনেও একই ভাবে বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা আছে, এই ক্ষমতাকে আরও কমানোর জন্য একটা সংশোধনী আনা হয়।

তাহলে তো সাধারণ প্রার্থী ও সরকার দলের বিপক্ষে যারা বিরোধী দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আসবে না। আর এরা যদি না আসে তাহলে এই নির্বাচন কোনো সময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না, প্রাণহীন হবে।’ তিনি বিগত নির্বাচনগুলোর পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন- ‘২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কিছু মামলা হয়েছে। হাইকোর্টেও এগুলোকে গায়েবি মামলা বলা হয়েছে। সিলেটের এবারের নির্বাচন আসার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল সিলেটে এই ধরনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৈশিষ্ট্য ও প্যাটার্নটা আগের ’১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনের মতো।

চৌহাট্টায় মিছিল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করতে গেছে; আসামি দুশ’ আড়াইশ’জন। অজ্ঞাত। আরও কোনো জায়গায় তিনশ’ দেখলাম। এভাবে শত শত আসামি দিয়ে নির্বাচনের আগে সবাইকে ধরে জেলে দেয়া হয় বলে আমরা দেখি। এরা বিরোধী দলের কর্মী, সমর্থক ও নেতা। এখন এই যদি হয় তাহলে নির্বাচনের দিন বিরোধী প্রার্থীরা কোনো এজেন্ট ও কর্মী পাবে না। ভোটাররা জেলখানায় আবদ্ধ থাকবে। সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ এবং সচেতন একজন মানুষ কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাবে- প্রশ্ন রাখেন শাহীন।’ জানান- ‘এ কারণে এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। নিরপেক্ষ হবে না। এবং এটা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সভাপতি ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘ইমেজ, গ্রহণযোগ্যতা যা বলুন; আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন সেটি হারিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহও কমে গেছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা বিকল্প প্রার্থী না থাকার কারণে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে।’ তিনি জানান, ‘কতো পার্সেন্ট ভোট না পড়লে নির্বাচন বাতিল হবে সে সম্পর্কিত কোনো আইন নির্বাচন কমিশনের নেই।

যদি এটা থাকতো তাহলে নির্বাচন শেষে ভোটারের রায় বোঝা যেতো। কিন্তু যেহেতু সেটি নেই, এ কারণে সিটি নির্বাচন খেল হারিয়েছে।’ তবে- সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বাচনে যারা প্রার্থী হচ্ছেন সবাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি কাউকে ছোটো, আবার কাউকে বড় করে দেখছেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সিলেটবাসীর মন জয় করে তিনি মেয়র হতে চান। এ জন্য নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ সক্রিয় ভাবে রয়েছে। তবে- ধানের শীষ নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে নির্বাচন ‘ফ্রুটফুলি’ হতো বলে দাবি করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com