হাসিনা মুক্ত দেশে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম কারামুক্ত দিবস, শ্রদ্ধা হে মমতাময়ী - জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ১০:৩৩, বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

হাসিনা মুক্ত দেশে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম কারামুক্ত দিবস, শ্রদ্ধা হে মমতাময়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বুধবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪ ১২:৪৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বুধবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪ ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

 

অধ্যাপক ড. মোর্শেদ খান
আজ ১১ সেপ্টেম্বর। বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ১৭তম কারামুক্তি দিবস। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সেনাসমর্থিত সরকার ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর থেকে মুক্তির এ দিনটিকে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি আন্দোলনে সফল হয়েছেন। যে কারনে তাকে বলা হয় আপোসহীন নেত্রী।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার নামটি অনন্য মহিমায় মহিমান্বিত। সময়ের প্রয়োজনে দেশমাতৃকার জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠা ব্যক্তিত্ব তিনি।
খালেদা জিয়া সবসময়ই জনগণের জন্য দেশে থেকে রাজনীতি করে গেছেন। তিনি দলকে ছেড়ে কখনো যাননি। এক-এগারোয় খালেদা জিয়াকে বারবার চলে যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি যাননি। স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে নানা ভাবে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। শত অন্যায়, অত্যাচারের শিকার হয়েও তিনি দেশ ছেড়ে চলে যায়নি। তবে সময়ের ব্যবধানে সেই স্বৈরাচারী হাসিনা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বেগম খালেদা জিয়া সাধারণ গৃহবধু থেকে হয়ে উঠেন তুখোড় রাজনীতিক, অন্দর থেকে আসীন হন বিশ্বমঞ্চে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তকারীদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। সহধর্মীনি বেগম খালেদা জিয়া তখন পুরোদস্তুর গৃহিনী। এরপর নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার মধ্যদিয়ে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তারপর শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।
১৯৮৩ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। এসময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩-এর সেপ্টেম্বর থেকে সাত দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে আট দল ও পাঁচ দল হয়। আট দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দল, পাঁচদলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে।
১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া এরশাদ হটাও এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে সংসদ ভেঙে দেন জেনারেল এরশাদ। পুনরায় শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এ বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদকে স্বপদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাস হয়।
১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেওয়ার পর থেকে মোট পাঁচবার তিনি গ্রেপ্তার হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হন। এরপর ১৯৮৪ সালের ৩ মে দ্বিতীয়বার, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তৃতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে দুই ছেলেসহ গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি হাই কোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদন্ড দেন। ওইদিনই তাকে আদালতের পাশে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি ছিলেন তিনি।কোনো অপরাধ না করেও শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বছরের পর বছর তাকে কারাবন্দি থাকতে হয়।
এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২০১৫ সালে প্রায় তিন মাস তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে আওয়ামী লীগ সরকার। বাড়ির সামনে বালুর ট্রাক রেখে ঘটানো হয় নজিরবিহীন ঘটনা। তাকে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে উচ্ছেদ করে ইতিহাসের জঘন্যতম নজির স্থাপন করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। তার দুই ছেলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সিংহ পুরুষ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। জিয়া পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনা যে জিঘাংসা প্রদর্শন করেছে তা কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথিকৃত। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি যে বিচক্ষণতা ও নেতৃত্বের দূরদর্শীতা দেখিয়েছেন তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ব্যক্তি জীবনে যেমন স্বল্প ও স্পস্টভাষী তেমনি রাজনীতিতে চমৎকার ধীশক্তি সম্পন্ন।
২০২৪ সাল, বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁক বদলের বছর।জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে নতুন স্বাধীনতা। স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে দেশ। ভারতের সেবাদাস স্বৈরাচার, খুনি হাসিনা এখন দিল্লিতেই অবস্থান করছেন। দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। ছাত্র-জনতার আপোসহীন আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণবিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য গণমানুষের এই সংগ্রাম যেন বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বকেই প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে দেশের অসংখ্য-অগুনতি মানুষের মতো আমার জীবনকে বিষিয়ে তোলা হয়।শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে পত্রিকায় কলাম লেখার অপরাধে আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। একদিনের নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়। আমি ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীসহ পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রাস্তায় নেমে পড়ি।
আজকে গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যখন এই লেখাটি লিখছি তখন আর দেশের সেই পরিস্থিতি নেই। দেশ আজ স্বৈরাচার মুক্ত। দেশ-মাতৃকার জন্য নিবেদিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির এই মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন হাজার বছর ধরে। কারামুক্তি দিবসে আপনাকে বিরোচিত অভিনন্দন। আপনার লড়াই-সংগ্রাম আর আত্মত্যা্গে অনুপ্রাণিত হোক প্রজন্মের পর প্রজন্ম। দীর্ঘায়ু হোন দেশ মাতা বেগম খালেদা জিয়া।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com