২৩ জেলা কমিটির ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপি হাইকমান্ড বিতর্কিত-নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, মে ৬, ২০২৩ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, মে ৬, ২০২৩ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

ডেস্ক নিউজ
বিএনপির ২৩ সাংগঠনিক জেলা কমিটির কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড। এসব জেলায় ৬ মাস মেয়াদের আহ্বায়ক কমিটি বিভিন্ন অজুহাতে বছরের পর বছর পার করছে। তাদের অধীনে থাকা অর্ধেক ইউনিটের কমিটিও গঠন করতে পারেনি। যেসব কমিটি গঠন করেছে তা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা পড়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং চরমে থাকায় সাংগঠনিক অবস্থাও এখন নাজুক। কয়েকটিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি দুগ্রুপ পৃথকভাবেও পালন করছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও অবহিত করা হয়েছে। আন্দোলনে গতি আনতে এসব জেলার নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কাজও শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপি দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন এসব তথ্য।
সূত্রমতে-মাদারীপুর, নেত্রকোনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, বাগেরহাট, মৌলভীবাজার, বান্দরবান, চাঁদপুর, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল মহানগর ও উত্তর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, গাজীপুর মহানগর, শরীয়তপুর এ ২৩ সাংগঠনিক জেলার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এখন হযবরল অবস্থা। কোনো কোনো জেলার নেতারা দুভাগ, এমনকি তিন ভাগেও বিভক্ত।
নেতারা জানান, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ দশ দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। এ অবস্থায় ২৩ সাংগঠনিক জেলার বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করতে না পারলে আন্দোলনে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘কিছু জেলায় ঝামেলা আছে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ঝামেলা নিরসনের জন্য যেখানে যেভাবে করা দরকার তা করছি। আন্দোলনকে সফল করতে দ্রুতই সব সমাধান করা হবে।’
অনেক জেলায় আবার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির সমন্বয়হীতার কারণে কর্মসূচি পালনেও প্রভাব পড়ছে বলে নেতারা মনে করছেন। তাই এখন থেকে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকও হয়। এতে সব বিভাগীয় সংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ দুই নেতা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারাও ছিলেন।
ওই বৈঠকে স্কাইপিতে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে কোন জেলায় কি অবস্থা, সমন্বয় করে কাজ হচ্ছে কিনা ৪ দিনের মধ্যে তার একটি প্রতিবেদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে ১০ মে আবারও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘অতীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যখন নেত্বত্ব দিয়েছেন, তখন সব জেলার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সমন্বয় ছিল। চলমান আন্দোলনেও সমন্বয় আছে। তবে অনেকের বক্তব্য কিছু জেলায় সমন্বয় নেই। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তাদের মতো করে চলে। এখন থেকে প্রতিটি জেলায় বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে সব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ বিএনপি মূল অভিভাবক সংগঠক। এর সঙ্গে সমন্বয় করে নেতৃত্ব দিতে হবে, নিতে হবে। কোন জেলায় কি অবস্থা, সমন্বয় করে কাজ হচ্ছে কিনা এ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সাংগঠনিকভাবে আমরা কাজ করছি।’
জানা গেছে, ২৩ জেলার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় দপ্তরে দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাগেরহাটের আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। সাবেক সভাপতি এমএ সালামের সঙ্গেও বিরোধ তুঙ্গে। বর্তমান কমিটি ইউনিট কমিটিও শেষ করতে পারেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান একক ক্ষমতায় সব কর্মকাণ্ড করছেন। এছাড়াও তিনি অধিকাংশ সময়ই অসুস্থ থাকেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। এ দুজনের আবার দুটি আলাদা বলয় রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনজন বিএনপি থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের সঙ্গেও বর্তমান কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। বান্দরবান জেলা কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে গত সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী ও সাবেক সভাপতি সাচিং প্রু’র সঙ্গে।
এমনকি দুই গ্রুপ পৃথকভাবে কর্মসূচিও পালন করছে। কুষ্টিয়া জেলা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। মাদারীপুর জেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। জয়পুরহাটে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য মরহুম মোজাহার আলী প্রধান ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সামছুল হক-এ দুই পরিবারের হাতে জিম্মি বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এসব কমিটিতে তাদের আত্মীয়দেরকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুরেও দুই গ্রুপ। ভোলার আহ্বায়ক একদিকে, সদস্য সচিব ও যুগ্ম আহ্বায়কের ভিন্ন গ্রুপ। পিরোজপুর জেলা কমিটি গঠনে অনেক যোগ্য নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে যোগ্যতা অনুযায়ী পদ দেওয়া হয়নি। রাজশাহী জেলারও হযবরল অবস্থা, চেইন অব কমান্ড নেই। রাজশাহী মহানগরে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নেই। প্রকাশ্যে গ্রুপিং চলছে। চাঁদপুর জেলা কমিটির সভাপতির সঙ্গে ওই জেলার সব সংসদ-সদস্য প্রার্থী ও নির্বাহীর কমিটির অধিকাংশ নেতার সম্পর্ক নেই। প্রকাশ্যেই তারা আলাদাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। পাবনা জেলা কমিটিরও একই অবস্থা। সব ইউনিটেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে।
গাজীপুর মহানগর কমিটি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ। সম্প্রতি ‘জাগ্রত নব্বই’র ব্যানারে সাবেক ছাত্রনেতারা মহানগর বিএনপিকে বাঁচাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক শওকত হোসেন সরকার ও সদস্য সচিব এম মঞ্জুরুল করিম রনি যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের জায়গা দিচ্ছেন না। এমনকি সদস্য সচিবকে কোনো কর্মসূচিতেও পাওয়া যায় না। গাজীপুর মহানগরে নেতাকর্মীরা এক ধরনের অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছেন। এজন্য নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতারা সবাই একাট্টা হয়েছেন।যুগান্তর
জনতার আওয়াজ/আ আ
