একটি বিজয় ও একজন মেজর জিয়া - জনতার আওয়াজ
  • আজ দুপুর ১২:২০, শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

একটি বিজয় ও একজন মেজর জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২ ৬:১৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২ ৬:১৭ অপরাহ্ণ

 

সায়েক এম রহমান
আজ মন বলছে বিজয়ের মাসে ”শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের তাঁহার নিজের লেখা “একটি জাতির জন্ম” থেকে কিছু অংশ আজ লেখা কারণ এতে রয়েছে শহীদ জিয়া পাকিস্তান থাকাকালীন সময়ে তাঁহার স্কুল জীবনের কিছু স্মৃতি, কিছু কথা, এবং কেমন ছিল তাঁহার দেশপ্রেম। তাই সময়ের প্রয়োজনে পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরলাম এবং আমার কিছু কথা শেয়ার করার সুযোগ পেলাম।
স্কুলজীবন থেকেই পাকিস্তানিদের দৃষ্টি ভঙ্গির অসঙ্গতা আমার মনকে পীড়া দিত। আমি জানতাম, ” অন্তর দিয়ে ওরা আমাদের ঘৃণা করে”। স্কুল জীবনে বহুদিন শুনেছি আমার স্কুল বন্ধুদের আলোচনা। তাদের অভিবাবকরা বাড়িতে যা বলতো, তা তারা স্কুল প্রাঙ্গনে রোমন্হন করতো। আমি শুনতাম, মাঝে মাঝেই শুনতাম তাদের আলোচনার প্রধান বিষয় হতো, বাংলাদেশকে শোষণ বিষয়ক! পাকিস্তানি তরুণ সমাজকেই শেখানো হতো বাঙ্গালীদের ঘৃণা করতে।
বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রদের শিশু মনেই ঘৃণার বীজ উপ্ত করে দেয়া হতো। স্কুলে তাদের শিক্ষা দেয়া হতো, বাঙ্গালীকে নিকৃষ্ট জাতি হিসাবে বিবেচনা করতে। অনেক সময় আমি থাকতাম নিরব শ্রোতা। আবার মাঝে মাঝে প্রত্যাঘাতও হানতাম।
সেই স্কুল জীবন থেকেই মনে মনে আমার একটি আকাঙ্ক্ষা লালিত হতো, যদি কখনো দিন আসে, তা-হলে এই পাকিস্তানিবাদের অস্তিত্বেই আমি আঘাত হানবো।
সযত্নে এই ভাবনাকে আমি লালন করতাম। আমি বড় হলাম। সময়ের সাথে সাথে আমার সেই কিশোর মনের ভাবনাটাও পরিণত হল, জোরদার হল। পাকিস্তানি পশুদের বিরুদ্ধে অস্র ধরার আকাঙ্খা দূর্বার হয়ে উঠত মাঝে মধ্যে। উদগ্র আকাঙ্খা জাগত পাকিস্তানের ভিত্তি ভূমি টাকেও তছনছ করে দিতে কিন্তু উপযুক্ত সময় আর স্হানের অপেক্ষায় দমণ করতাম সেই অপেক্ষাকে।
৫৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন। যুক্তফ্রন্টের বিজয় রথের চাকার পিষে পিষ্ট হলো, “মুসলিম লীগ “। বাঙ্গালীদের আশা আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক যুক্তফ্রন্টের বিজয় কেতন উড়লো বাংলায়।
আমি তখন দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যাডেট। আমাদের মনে জাগলো তখন পুলকের শিহরণ। যুক্তফ্রন্টের বিরাট সাফল্যে আমরা সবাই পর্বত ঘেরা অ্যাবোটাবাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনন্দে উদ্বেলিত হলাম। আমরা বাঙ্গালী ক্যাডেটরা আনন্দে হলাম আত্নহারা। খোলাখুলি ভাবে প্রকাশ করলাম সেই বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের তরঙ্গমালা।
একাডেমি ক্যাফেটেরিয়ায় নির্বাচনী বিজয় উৎসব করলাম আমরা। এ ছিল আমাদের বাংলা ভাষার জয়। এ ছিল আমাদের অধিকারের জয়। এ ছিল আমাদের আশা আকাঙ্খার জয়। এ ছিল আমাদের জনগণের, আমাদের দেশের এক বিরাট সাফল্য।
এই সময়ই একদিন কতিপয় পাকিস্তানি ক্যাডেট আমাদের জাতীয় নেতা ও জাতীয় বীরদের গালাগাল করলো। তাদের আখ্যায়িত করল বিশ্বাস ঘাতক বলে। আমরা প্রতিবাদ করলাম। অবতীর্ণ হলাম তাদের সাথে উষ্ণতম কথা কাটাকাটিতে। মুখের কথা কাটাকাটিতে এই বিরোধের মীমাংসা হলো না। ঠিক হল,,,,এর ফয়সালা হবে মুষ্টিযুদ্ধের দ্বন্ধে।
বাঙ্গালীদের জম্মগত অধিকার প্রতিষ্টা করতে আমি বক্সিং গ্লাভস হাতে তুলে নিলাম। পাকিস্তানির গোয়ার্তুমীর মান বাঁচাতে এগিয়ে এলো এক পাকিস্তানি ক্যাডেট, তার নাম লতিফ (পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অর্ডিন্যান্স কোরে এখন ১৯৭২ সে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল)। লতিফ প্রতিজ্ঞা করল, আমাকে সে একটু শিক্ষা দেবে। পাকিস্তানের সংহতির বিরুদ্ধে যাতে আর কথা বলতে না পারি, সেই ব্যবস্হা না কি করবে। এই মুষ্টিযুদ্ধ দেখতে সেদিন জমা হয়েছিল অনেক দর্শক। তুমুল করতালির মাঝে শুরু হল,,,,,বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের দুই প্রতিনিধির মধ্যে মুষ্টিযুদ্ধ। লতিফ আর তার পরিষদ অকথ্য ভাষায় আমাদের গালাগাল করল। হুমকি দিলো বহুতর। কিন্তু মুষ্টিযুদ্ধ স্হায়ী হলো না ত্রিশ সেকেন্ডের বেশী। পাকিস্তানপন্হী আমার প্রতিপক্ষ ধুলোয় লুটিয়ে পড়লো। আবেদন জানালো,,,, সব বিতর্কের শান্তি পূর্ণ মীমাংসার জন্য। ঘটনাটি আমার মনে এক গভীর রেখাপাত করেছিল।
এখানে প্রতিয়মান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্কুল জীবন থেকেই পাকিস্তানিদের চেনাজানার সুযোগ হয়েছিল। অতি নিকট থেকে উপলব্ধি করেছিলেন, বিশেষ করে ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের বিষয়ক, তাঁহার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। আরো বেশী রেখাপাত করেছিল,,,,, আমাদের জাতীয় নেতা শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী গং দের গালাগাল করা বিষয়ক। শুধু মাত্র শহীদ জিয়ার দেশপ্রেম ও জাতিপ্রেমের জন্যই, তখন থেকে তাঁহার মনে জম্মেছিল ঘৃণা ও আক্রোশ।
এখানে পরিস্কার,,,,, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই দিনগুলোর অভিজ্ঞতায়, সেই থেকেই পাকিস্তানবাদের অস্তিত্বে আঘাত হানার কঠিন সংকল্প করেছিলেন। ঠিকই সযত্নে রেখেছিলেন তাঁহার ভাবনাগুলো। উদগ্র আকাঙ্খা জাগছিলো পাকিস্তান বাদকে তছনছ করে দিতে কিন্তু উপযুক্ত স্হান এবং সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিলেন, ৭১ এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে।
সবমিলে পাক হানাদারদের শিবিরে আঘাত হানা এবং সাহসী সেক্টর কমান্ডার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে, সেইদিন পাকিস্তান বাদের অস্তিত্বকে তছনছ করেছিলেন। তাঁহার সৈনিক জীবন ও স্বাধীনতার ঘোষণা স্বার্থক হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাধ্যমে। তাই বলি “তুমি-ই বাংলাদেশ “!
Sayak M Rahman
লেখক ও কলামিস্ট,

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ