রমজান ও ঈদের আগেই গৃহহীনদের হাতে বিনামূল্যে আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি আধাপাকা বাড়ি হস্তান্তর করার পাশাপাশি আরও সাতটি জেলা এবং ১৫৯ উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বাড়ি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সব উপজেলাসহ ১৫৯টি উপজেলা গৃহহীন এবং ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলা গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। ফলে সারা দেশে মোট ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে একটি উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তার সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’ এ সময় সরকারপ্রধান কোনো জেলায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন রয়েছে কি না তা জানতে তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এ সরকারের লক্ষ্য হওয়ায় প্রত্যেককে বাড়ি দেওয়া হবে। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বাড়ি, আশ্রয় এবং জীবিকার সুযোগ পাবে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তারা সর্বদা জনগণের কল্যাণে কাজ করে এবং জনগণ এর সুফল পায়।’

তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলেও এ সময় সবার আগে তারাই জনগণের পাশে ছিল। ওই সময় আমরা প্রথমে ঘূর্ণিঝড়কবলিত মানুষের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন সরকারপ্রধান ঘুমিয়ে ছিলেন এবং তিনি কিছুই জানতেন না। আর তখনকার তিন বাহিনীর প্রধান গলফ খেলছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ে যে এত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, তা-ও তারা জানতেন না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেই ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়, আমরা নিজের চোখে দেখেছি। আমরা ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে দেখি মানুষ ও পশুপাখির লাশ একসঙ্গে ভাসছে। আমরা সেখানে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মানুষের পাশে দাঁড়াই, তাদের সাহায্য করি এবং মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করি।’

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে কক্সবাজার শহরের উপকণ্ঠে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল তারা বেশিরভাগই ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের শিকার। ওই সময় প্রায় ৪ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু অনেক পাঁচতলা বাড়ির ফ্ল্যাটে আশ্রয় নিয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তাদেরও সরকার বাড়ি দিয়েছে। কেউ ঠিকানা ছাড়া থাকবে না। আমরা তাদের শুধু ঘরই দিইনি, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাদের জীবিকার জন্য ঋণও দিয়েছি। তারা এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি হস্তান্তর করেন। গতকাল আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর বিতরণের সঙ্গে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট গৃহ বিতরণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। এ সময় বাড়ি প্রাপ্তদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রার ওপর একটি ভিডিও-প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশালের বানারীপাড়ার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।