স্বৈরাচারী আইনের জালে গণতন্ত্র যোদ্ধা ও অরাজনৈতিক ছায়াসঙ্গী - জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ৭:১৫, বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

স্বৈরাচারী আইনের জালে গণতন্ত্র যোদ্ধা ও অরাজনৈতিক ছায়াসঙ্গী

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, জানুয়ারি ৬, ২০২৩ ১০:৩৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, জানুয়ারি ৬, ২০২৩ ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

 

অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান
বাংলাদেশের জনগণ যখন দেশের গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারে আন্দোলন করছে রাজপথে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিচ্ছে নাগরিকের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার চিৎকারে। সংবাদপত্র ও সুশীল সমাজের মুখ বন্ধ করা হয়েছে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ নামক কালা আইনের মাধ্যমে। দেশের অর্থনীতির মুলশক্তি ‘বৈদাশিক মুদ্রার রিজার্ভ’ নেমে গেছে তলানিতে।
দৈনিক সমকালে প্রকাশিত সংবাদে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার নাগাদ বাংলাদেশের রিজার্ভ দাড়িয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলারে। দেশের সুর্য সন্তান প্রবাসীদের রক্ত ঘামে অর্জিত ডলার দিয়ে যখন দেশের রিজার্ভের স্বাস্থ্য ভালো রাখছে, তার বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে হাজার কোটি টাকা বেনামী ঋণ নিয়ে বিদেশে ডলার পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা ও তাদের তোষামদ বাহিনী।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি’ বলছে, বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০, ৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।যার মধ্যে ২০১৫ সালে দেশ থেকে পাচার হয়ে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। অথচ, সবচেয়ে অবাক লাগে যখন বাংলাদেশে ব্যাংকের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হয়, কতটাকা পাচার হয়েছে সেটার তথ্য তাদের কাছে নেই !
২০২২ সালের ৩১ অক্টোবরের দৈনিক যুগান্তরের খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার হয়েছে। তবে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, সে তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ-এর প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস।
নাকি সবটাই আয়নাবাজি! এবার মুল প্রসঙ্গে আসি, সপ্তাহের শেষদিন মানুষ যখন ছুটিতে, তখন গণমাধ্যমে একটি খবর আলোড়ন তোলে সাধারণ মানুষের মনে। দেশের প্রায় সবগুলো গণমাধ্যমের উপরেরদিকে প্রচার পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, দুদকের এক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের নাগাল না পাওয়ায় তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সংবাদ পর্যালোচনায় এই মত দিচ্ছি না। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মনে প্রশ্ন জাগে যে দেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যখন লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তখন দেশের গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের অগ্রসৈনিক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও রাজনৈতিক রোষানলে তাকে দেশান্তর হতে হয়েছে। দেশি-বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।
খবরের সবচেয়ে অবাক করা অংশটি হলো রাজনৈতিক রোষানলের শিকার তারেক রহমানের সাথে তার স্ত্রী বিশ্বের ৫৬ টি দেশের কার্ডিওলজিস্টদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করা চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে রায় প্রদান। দেশে বিদেশে কার্ডিয়াক চিকিৎসায় খ্যাতি অর্জন করা ডা. জুবাইদা রহমানের রাজনীতিতে অংশ গ্রহন নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র গণতন্ত্রের যোদ্ধা তারেক রহমানের ছায়াসঙ্গী হিসেবে অনুপ্রেরণাময়ী স্ত্রী হিসেবে পাশে থাকাই তার অপরাধ? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে সাধারণ মানুষের মনে।
দেশের সকল আইন শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর প্রয়োগের জন্য? বিরোধীদল মানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। যে দলটি গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।
দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করাই বিএনপি চেয়ারপার্সন জনগণের ভোটে নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, তথা জিয়া পরিবারের অপরাধ! দেশের মানুষের জন্য অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনীতির স্বপ্ন দেখানোই তারেক রহমানের অপরাধ! একজন শিক্ষক হিসেবে অনেক শীক্ষার্থীর মনের কথাই জানতে পেরেছি। নব্বই দশকে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের কেউই এখন পর্যন্ত কোন জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।
দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে ভোট নামক শব্দকে উৎপাটন করা হয়েছে সমূলে। এমন দেশের জন্য সংগ্রামী বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ যুদ্ধ করেননি। স্বাধীনতার চেতনা নামে যে স্বৈরাচারি বিষবাষ্প ছড়ানো হয়েছে সমাজে, তা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে পারেন একজনই, তিনি তারেক রহমান।
এমন ন্যাক্কারজনক রায়ের প্রতিবাদ আমাদের জানানেই। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সংবিধানের দোহাই দিয়ে যে স্বৈরাচারীতন্ত্র কায়েম করা হচ্ছে, জনগণ এর জবাব দেবে রাজপথে, নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। অপেক্ষা শুধু সময়ের।
লেখক — মহাসচিব, ইউনিভার্সি টিটিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ