হাড়ে ব্যথা: কারণ জেনে চিকিৎসা নিন - জনতার আওয়াজ
  • আজ দুপুর ২:১৯, বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

হাড়ে ব্যথা: কারণ জেনে চিকিৎসা নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শনিবার, নভেম্বর ৫, ২০২২ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শনিবার, নভেম্বর ৫, ২০২২ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ

 

মাঝ বয়সি বা তার বেশি বয়সের নারী-পুরুষদের জন্য হাড়ের ব্যথা এক সাধারণ সমস্যা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অনেক পরিবর্তন হয়। এ সময় শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশির আকার ও হাড়ের ঘনত্ব কমে আসে। এতে বারবার আঘাত লাগার প্রবণতা দেখা দেয় এবং হাড় ভেঙে যায়। এ থেকে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। হাড়ে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, বা ক্যানসারের কারণেও হাড়ে ব্যথা হতে পারে। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ও অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

বিভিন্ন কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

* ইনজুরি : ইনজুরি বা আঘাত হাড়ে ব্যথার সাধারণ কারণ। গাড়ি এক্সিডেন্ট বা উঁচু থেকে পড়ে যাওয়া থেকে ব্যথা হতে পারে।

* খনিজের ঘাটতি : হাড় শক্তিশালী করতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিন, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র প্রয়োজন হয়। এর অভাবে হাড়ের ভঙ্গুর রোগ অস্টিওপরোসিস হয়। অস্টিওপরোসিসের শেষ স্তরে হাড়ে ব্যথা হয়।

* ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার : স্তন, ফুসফুস, থাইরয়েড, কিডনি ও প্রোস্টেটের ক্যানসারে এ সকল অঙ্গ থেকে হাড়ে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।

* হাড়ের ক্যানসার : হাড়েরও ক্যানসার হয়। হাড়ের স্বাভাবিক গঠন ধ্বংসের মাধ্যমে এটা হাড়ে ব্যথা ঘটাতে পারে।

* রক্ত সরবরাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রোগ : সিকেল সেল এনিমিয়া হাড়ে রক্ত সরবরাহে বাধা দেয়। ফলে হাড়ের টিস্যু মারা যেতে শুরু করে। এর ফলে হাড়ে মারাত্মক ব্যথা ও হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে।

* ইনফেকশন : একে অস্টিওমাইলাইটিস বলে। এই ইনফেকশন হাড়ের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারে ও হাড়ে ব্যথা ঘটায়।

* লিউকেমিয়া : লিউকেমিয়া হলো অস্থিমজ্জার ক্যানসার। অধিকাংশ হাড়ে অস্থিমজ্জা থাকে এবং এটা হাড়ের কোষ তৈরি করে। এ রোগীদের হাড়ে বিশেষ করে পায়ে ব্যথার কথা বলেন।

উপসর্গ

হাড়ে ব্যথার সবচেয়ে লক্ষণীয় উপসর্গ হলো বসে থাকলে বা নড়াচড়া করলে অস্বস্তি লাগে। অন্যান্য উপসর্গগুলো নির্ভর করে হাড়ের ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোর ওপর।

* ইনজুরির ক্ষেত্রে যে হাড়ে ব্যথা হয় সেখানে আরও কিছু উপসর্গ থাকে যেমন স্থানটি ফুলে যাওয়া, দৃশ্যমান ভাঙা বা অঙ্গবিকৃতি, আঘাতের স্থানে কট করে শব্দ হওয়া ইত্যাদি।

* খনিজের ঘাটতি হলে হাড়ের ব্যথার সঙ্গে মাংসপেশি ও টিস্যুতে ব্যথা করে, ঘুমের সমস্যা হয়, পেশি কামড়ায়, অবসাদ ও দুর্বল লাগে।

* অস্টিওপরোসিসে পিঠে ব্যথা করে, রোগী নুয়ে থাকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যায়।

* ছড়িয়ে পড়া বা মেটাস্টাটিক ক্যানসারে বিস্তৃত উপসর্গ থাকে যা নির্ভর করে ক্যানসারটি কোথায় হয়েছে তার ওপর। মাথাব্যথা, বুকেব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, খিঁচুনি, মাথাঘোরা, জন্ডিস, ছোট ছোট শ্বাস ফেলা, পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকে।

* হাড়ের ক্যানসারে হাড় ভাঙা বেড়ে যায়, ত্বকের নিচে পিণ্ড অনুভব করা যায়, টিউমারটি নার্ভে চাপ দিলে অসাড় বা ঝিনঝিন অনুভূত হয়।

* হাড়ে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে জয়েন্টে ব্যথা হয়, জয়েন্ট কাজ করে না ও দুর্বল হয়ে যায়।

* ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ইনফেকশনের স্থানটি লাল হয়ে ফুলে যায়, গরম হয়ে যায়। অঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়, বমিবমি ভাব হয়, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।

* লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে, ত্বক ফ্যাকাশে হয়, রোগী ছোট ছোট শ্বাস নেয়, রাতে ঘেমে যায় ও হঠাৎ ওজন কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় হাড়ে ব্যথা

গর্ভবতীদের পেল্ভিক বা শ্রেণির হাড়ে ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কোমরের হাড়ে ব্যথা এবং পেলভিক জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসব না হওয়া পর্যন্ত ব্যথা যায় না। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলে উপসর্গ কমে যায়। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-

* জয়েন্টগুলো সঠিকভাবে নড়াচড়া করা

* ফিজিক্যাল থেরাপি

* ব্যায়াম

* তলপেটের ব্যায়াম

কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়

চিকিৎসার জন্য হাড়ের ব্যথার কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। চিকিৎসক রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করবেন, সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করবেন। সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে-

* ব্যথা কোথায় হয়?

* প্রথম কবে ব্যথা শুরু হয়েছিল?

* ব্যথা কি খুব খারাপ অবস্থায় যায়?

* হাড়ে ব্যথার সঙ্গে কি অন্য কোনো উপসর্গ রয়েছে?

চিকিৎসক ভিটামিনের ঘাটতি দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে দিতে পারেন, ক্যানসার আছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্যানসার মার্কার পরীক্ষা দিতে পারেন। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক ইনফেকশন ও এড্রেনাল গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানতে পারেন। হাড়ের এক্স-রে, এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান দ্বারা ইনজুরি, হাড়ের ক্ষত এবং হাড়ের মধ্যকার টিউমার দেখা হয়। মাল্টিপল মায়োলোমাসহ অস্থিমজ্জার মধ্যকার অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়।

হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা

হাড়ের ব্যথার কারণ নির্ণয় করার পর কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। আক্রান্ত স্থানটি যতটা সম্ভব বিশ্রামে রাখতে হবে। মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের ব্যথা উপসমের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। যদি ইনফেকশন সন্দেহ করা হয়, তাহলে চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক প্রদান করেন। ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করবেন, এমনকি উপসর্গ চলে যাওয়ার পরও কিছুদিন চলবে। প্রদাহ কমাতে কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-

* ব্যথানাশক ওষুধ : হাড়ের ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়, তবে এসব ওষুধ হাড় ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোকে সারিয়ে তোলে না। সাধারণত আইবুপ্রফেন বা প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়।

* এন্টিবায়োটিক : যদি হাড়ে ইনফেকশন থাকে, তাহলে ইনফেকশন সৃষ্টির জন্য দায়ী জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলতে এন্টিবায়োটিক সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্লিন্ডামাইসিন বা ভ্যানকোমাইসিন দেয়া হয়।

* পুষ্টির জোগান : যে রোগীর অস্টিওপরোসিস রয়েছে তাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র মাত্রা ঠিক রাখার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে পুষ্টির সাপ্লিমেন্ট প্রদান করা হয়।

ক্যানসারের চিকিৎসা

ক্যানসারজনিত হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা কষ্টসাধ্য। ক্যানসারের সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপি। কেমোথেরাপি হাড়ের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। বাইফসফোনেট জাতীয় ওষুধ মেটাস্টাটিক বোন ক্যানসারের রোগীদের হাড়ের ক্ষতি রোধ করে ও ব্যথা কমায়। ব্যথা কমাতে অনেক সময় অপিয়েট ব্যথানাশকও দেওয়া হয়।

সার্জারি

ইনফেকশনের কারণে হাড়ের কোনো অংশ মরে গেলে সেই অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়। হাড় ভেঙে গেলে ও টিউমার থাকলে সার্জারির প্রয়োজন। মারাত্মক ক্ষেত্রে রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

হাড়ের ব্যথা কীভাবে রোধ করবেন

* নিয়মিত ব্যায়াম করবেন

* পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ করবেন

* মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার করবেন

কখন ডাক্তার দেখাবেন

হাড়ে খুব ব্যথা করে এবং কয়েকদিনে ব্যথা ভালো না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। হাড়ে ব্যথার সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়া, অথবা সাধারণ অবসন্নতা ইত্যাদি উপসর্গ থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। ইনজুরির কারণে হাড়ে ব্যথা হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। আঘাত হাড়ে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ